Apple ও Google -এর AI টুল কখন ব্যবহার করবেন? জেনেনিন ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য বিকাশে লেখালেখির জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। যে টুলগুলো একসময় কেবল বানান বা ব্যাকরণ সংশোধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা পুরো একটি প্রস্তাবনা লিখে দিতে পারে, জটিল বিষয়ের সারসংক্ষেপ তৈরি করতে পারে, এমনকি আপনার লেখাকে আরও প্রাঞ্জল ও পেশাদার করে তুলতে পারে। এই এআই-নির্ভর লেখার সুবিধা এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের হাতের মুঠোয়।

অ্যাপল ও গুগল তাদের নিজস্ব এআই টুলগুলো আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিনামূল্যে সহজলভ্য করেছে। তবে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, এআই টুল ব্যবহারের আগে জানা দরকার কখন এআইয়ের উপর নির্ভর করা যায়, আর কখন নিজের সৃজনশীলতা ব্যবহার করা উচিত।

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স: আইফোন ব্যবহারকারীদের জন্য বিল্ট-ইন লেখার টুল
অ্যাপলের নতুন এআই টুলের নাম ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’। এর মধ্যে থাকা ‘রাইটিং টুল’ ব্যবহার করতে হলে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডে আইওএস ১৮.১ বা তার পরের সংস্করণ থাকতে হবে এবং একটি নতুন মডেলের ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।

এই রাইটিং টুলটি যেকোনো অ্যাপে ব্যবহার করা যায় যেখানে আপনি টাইপ করেন বা ভয়েস ডিক্টেশন ব্যবহার করেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ‘পেইজেস’ অ্যাপে কোনো টেক্সট লেখেন, তবে একটি অংশ নির্বাচন করে রাইটিং টুল মেনুতে গেলেই ‘প্রুফরিড’, ‘রিরাইট’, বা ‘সামারাইজ’-এর মতো অপশনগুলো পাবেন। এক ট্যাপে আপনি লেখার ভঙ্গি বদলে এটিকে আরও প্রফেশনাল, বন্ধুত্বপূর্ণ বা সংক্ষিপ্ত করে তুলতে পারেন। এমনকি, প্রয়োজনে লেখাকে লিস্ট বা টেবিল আকারেও রূপান্তর করা সম্ভব। যদি আপনার পছন্দ না হয়, তবে সহজেই আগের লেখায় ফিরে যাওয়ার সুবিধাও রয়েছে।

অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স থেকে সরাসরি একটি সম্পূর্ণ খসড়া লেখাও সম্ভব, তবে এজন্য চ্যাটজিপিটি অপশনটি সক্রিয় করতে হবে। ‘কম্পোজ’ বোতামে ট্যাপ করে নির্দেশনা অনুসরণ করলেই এটি সম্ভব।

গুগলের জেমিনাই: অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস-এর শক্তিশালী সহকারী
গুগলের তৈরি ‘জেমিনাই’ এখন জনপ্রিয় ‘গুগল অ্যাসিসট্যান্ট’-এর জায়গা নিয়েছে। এটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় ফোনেই পাওয়া যায় এবং ব্রাউজারেও ব্যবহার করা যায়। আরও উন্নত সংস্করণ ব্যবহার করতে চাইলে মাসে ২০ ডলার খরচ করতে হবে।

জেমিনাই-এর ব্যবহার পদ্ধতিও অত্যন্ত সরল। যেমন, আপনি চাইলে একটি মেমো কপি করে জেমিনাই-তে পেস্ট করে বলতে পারেন, “এটি প্রুফরিড ও ফ্যাক্টচেক করে দাও।” জেমিনাই এমনকি নিজে থেকেই একটি টেক্সট লিখে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি বিস্তারিত নির্দেশনা দিতে পারেন: “আগামী ২ ও ৩ অগাস্ট একটি ফেস্টিভালের অনুমতির জন্য সিটি কাউন্সিলের কাছে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে দাও, যেখানে থাকবে পাপি প্যারেড, উইনার ডগ ডার্বি, ফেচ প্রতিযোগিতা এবং স্থানীয় পেট শপগুলোর বুথ।” জেমিনাই লেখাটি প্রস্তুত করে দিলে আপনি সেটা ‘গুগল ডকস’-এ সংরক্ষণ করে নিজে সম্পাদনা করে নিতে পারবেন।

বিকল্প এআই টুল ও কিছু সতর্কতা
আপনার ডিভাইস যদি অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বা জেমিনাই চালানোর মতো আধুনিক না হয়, তাতেও সমস্যা নেই। ‘গ্রামারলি’, যা ২০০৯ সাল থেকেই প্রচলিত, সেটির মোবাইল অ্যাপ আপনার ফোনের কীবোর্ডের সাথেই কাজ করে বানান, ব্যাকরণ, টোন ঠিক করতে বা লেখাকে আরও প্রাঞ্জল করে তুলতে পারে। মাইক্রোসফটের ‘কোপাইলট’ এআই-ও মাইক্রোসফট ৩৬৫ এর সঙ্গে কাজ করে। এছাড়া অ্যাপ স্টোরে ‘প্যারাগ্রাফ এআই’, ‘সুডোরাইট’-এর মতো লেখাকেন্দ্রিক এআই অ্যাপও পাওয়া যায়। চ্যাটজিপিটি কিংবা অ্যানথ্রপিক -এর ‘ক্লাউডে’-এর মতো সাধারণ চ্যাটবটও এই কাজগুলো করতে পারে।

এআই যতই উন্নত হোক, এটি ভুল করতে পারে। তাই এর তৈরি করা লেখা যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সব কিছুতে এআই ব্যবহার করলে আপনার নিজস্ব লেখার ভঙ্গি হারিয়ে যেতে পারে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নষ্টনীড়’ গল্পের উদাহরণ টেনে বলা হয়েছে, যদি এর শুরুর কয়েকটি লাইন অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স বা জেমিনাই দিয়ে পাল্টে দেওয়া হয়, তবে মূল লেখার সাহিত্যিক স্পর্শ আর থাকে না।

মূল কথা হলো, আপনার লেখার উপর আপনারই কর্তৃত্ব থাকা উচিত। এমন যেন না হয় যে কেউ আপনার লেখা পড়ে বলে ওঠে, “এটা কি এআই লিখেছে?” এআই একটি শক্তিশালী সহযোগী, কিন্তু চূড়ান্ত সৃজনশীলতা এবং নির্ভুলতার দায়িত্ব আপনার নিজেরই।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy