
ফেসবুকের মাদার প্রতিষ্ঠান মেটা (Meta) নতুন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (CCP) সঙ্গে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য শেয়ার করার অভিযোগের পর এবার ফরাসি প্রকাশক ও লেখকরা মেটার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, মেটা তাঁদের কপিরাইট করা কাজগুলো অনুমতি ছাড়াই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মডেল ট্রেনিংয়ের জন্য ব্যবহার করেছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনটি ফরাসি বাণিজ্যিক সংগঠন প্যারিসের একটি আদালতে মেটার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাঁরা দাবি করেছেন, মেটা তাদের কপিরাইটকৃত কন্টেন্ট ব্যবহার করে AI মডেল তৈরি করেছে, কিন্তু এর জন্য কোনো অনুমতি নেয়নি। ন্যাশনাল পাবলিশিং ইউনিয়ন (SNE), যারা ফরাসি বই প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব করে, অভিযোগ তুলেছে যে, তাদের সদস্যদের অনেক কাজ মেটার ডেটা পুলে অবৈধভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি ভিনসেন্ট মঁতাগনো বলেন, “মেটা কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করেছে এবং শোষণমূলক কার্যক্রমে জড়িয়েছে।”
এছাড়া, ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ অথরস অ্যান্ড কম্পোজার্স (SNAC), যারা ৭০০ লেখক, নাট্যকার ও সুরকারের প্রতিনিধিত্ব করে, তাদেরও একই অভিযোগ। তাঁরা বলছেন, AI সিস্টেমগুলো তাঁদের কাজ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শোষণ করছে, যা তাঁদের জন্য ক্ষতিকর। সংগঠনের সভাপতি ফ্রাঁসোয়া পেয়ারনি বলেন, “AI দ্বারা তৈরি ‘ভুয়া বই’ আসল বইয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে, যা লেখকদের ক্ষতি করছে।” এই সংগঠনগুলো দাবি করেছে, মেটার তৈরি ডেটা ডিরেক্টরি সম্পূর্ণ মুছে ফেলা হোক এবং অনুমতি ছাড়া এই ডেটা ব্যবহার বন্ধ করা হোক।
অন্যদিকে, মেটার বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একজন হুইসলব্লোয়ারের দাবি, মেটা চিনে প্রবেশের জন্য আগ্রহী ছিল এবং চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে গোপনে আলোচনা করেছে। মেটার প্রাক্তন গ্লোবাল পলিসি ডিরেক্টর সারা উইন-উইলিয়ামস জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে মেটা চিনের সরকারের কাছে সামাজিক মিডিয়া কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সেন্সরশিপ সিস্টেম তৈরি করতে রাজি হয়েছিল। এমনকি, একজন “প্রধান সম্পাদক” নিয়োগের পরিকল্পনাও ছিল, যার হাতে ফেসবুকের কন্টেন্ট মুছে ফেলার ক্ষমতা থাকত। রাজনৈতিক অস্থিরতার ক্ষেত্রে ফেসবুক চিনে বন্ধ করার অধিকারও দেওয়ার প্রস্তাব ছিল।
এই ঘটনাগুলো মেটার জন্য নতুন সংকট তৈরি করেছে। একদিকে ফরাসি প্রকাশক ও লেখকদের কপিরাইট লঙ্ঘনের মামলা, অন্যদিকে চিনের সঙ্গে তথ্য শেয়ারের অভিযোগ— এসব মিলিয়ে মেটার ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিস্থিতি মেটার ভবিষ্যৎ কৌশল এবং বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তির ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সকলের নজর রয়েছে।