
প্রযুক্তি বিশ্বে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে প্রতিযোগিতা তুঙ্গে। এই দৌড়ে গুগল ও মেটার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, আইফোন নির্মাতা অ্যাপল পর্দার আড়ালে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন আইফোন নির্মাতা কোম্পানি অ্যাপল সফটওয়্যার কোম্পানি পারপ্লেক্সিটি এআই কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছে। যদিও ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ডওয়াইড ডেভেলপার্স কনফারেন্স (WWDC)-এ অ্যাপল তাদের এআই পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি, তবে ভেতরের খবর বলছে, প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুসারে, অ্যাপল প্রাথমিকভাবে পারপ্লেক্সিটি এআই কেনার বিষয়ে তাদের অধিগ্রহণ বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে অভ্যন্তরীণ আলোচনা শুরু করেছে। পারপ্লেক্সিটি এআই মূলত একটি এআই-নির্ভর সার্চ স্টার্টআপ, যা অরবিন্দ শ্রীনিবাস প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি, তবে অ্যাপলের শীর্ষ কর্মকর্তারা স্টার্টআপটি নিয়ে বিভিন্ন সম্ভাব্য পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে দেখছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, দুটি প্রধান বিকল্প অ্যাপলের সামনে রয়েছে:
১. পার্টনারশিপ: একটি সম্ভাব্য পথ হতে পারে পারপ্লেক্সিটি-র প্রযুক্তির সঙ্গে অ্যাপলের আইওএস (iOS) প্ল্যাটফর্মের অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সরাসরি আইওএস-এ এআই-চালিত সার্চ অভিজ্ঞতা পাবেন।
২. পূর্ণ অধিগ্রহণ: আরেকটি সম্ভাবনা হলো পুরো কোম্পানিটিকেই কিনে নেওয়া। এর ফলে অ্যাপল সরাসরি পারপ্লেক্সিটি-এর এআই প্রযুক্তিকে তাদের ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি (Siri)-তে অথবা নিজস্ব পরিচালিত আরও বিস্তৃত সার্চ প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করতে পারবে।
কৌশলগত বিকল্প এবং ‘ব্যাকআপ প্ল্যান’:
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন আরও উল্লেখ করেছে যে, পারপ্লেক্সিটি অধিগ্রহণ অ্যাপলের জন্য একটি কৌশলগত বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে, গুগল এবং অ্যাপলের মধ্যে একটি বড় আর্থিক চুক্তি রয়েছে, যেখানে গুগল প্রতি বছর অ্যাপলকে অর্থ দেয় আইওএস ক্রোম ব্রাউজারে তাদের সার্চ ইঞ্জিনকে ডিফল্ট হিসেবে রাখার জন্য। যদি আদালত ভবিষ্যতে এই চুক্তি বন্ধ করার নির্দেশ দেয়, তাহলে অ্যাপলের কাছে পারপ্লেক্সিটি একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে থাকবে, যা তাদের নিজস্ব সার্চ সিস্টেম পরিচালনায় সাহায্য করবে। অর্থাৎ, গুগল না থাকলেও এই স্টার্টআপটি অ্যাপলের জন্য একটি ‘ব্যাকআপ প্ল্যান’ হিসেবে কাজ করবে।
এআই দৌড়ে অ্যাপলের অবস্থান:
ম্যাশএবল-এর মতো প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলি বলছে, পারপ্লেক্সিটি কিনে নেওয়া অ্যাপলের জন্য একটি কৌশলগত সাফল্য হবে। কারণ এআই প্রতিযোগিতায় অ্যাপল এখনও গুগল ও মেটার মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এবারের WWDC-তেও অ্যাপল তাদের নিজস্ব এআই ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ (Apple Intelligence) কবে আসবে অথবা সিরির নতুন আপডেট সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য জানায়নি। এই অধিগ্রহণ অ্যাপলকে এআই-এর ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বাজারে তাদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।