
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) গবেষণার শীর্ষস্থান দখলের লড়াই এখন তুঙ্গে, আর এই যুদ্ধে প্রযুক্তি জায়ান্টদের মধ্যে চলছে তীব্র বেতন প্রতিযোগিতা। বিশেষ করে ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড এবং মেটা—এই তিন সংস্থা ‘সুপার ইন্টেলিজেন্স’ তৈরির দৌড়ে একে অপরের থেকে এগিয়ে থাকতে মরিয়া। এই প্রতিযোগিতার মধ্যেই বিস্ফোরক দাবি করলেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান। সম্প্রতি এক পডকাস্টে তিনি জানিয়েছেন, ১০ কোটি ডলারের বেশি পারিশ্রমিকের লোভনীয় প্রস্তাব দিয়েও মেটা তাঁর প্রতিষ্ঠানের সেরা কর্মীদের দলে টানতে ব্যর্থ হয়েছে।
অল্টম্যান পডকাস্টে বলেছেন, “মেটা আমাদের দলের অনেকের কাছে বিশাল অঙ্কের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এমনকি বছরে ১০ কোটি ডলারেরও বেশি পারিশ্রমিকও অফার করেছে।” তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, “তবে আমি খুব খুশি যে এখন পর্যন্ত আমাদের সেরা কেউই সেই প্রস্তাবে রাজি হননি।” অল্টম্যানের এই মন্তব্য এআই শিল্পে প্রতিভার মূল্য এবং কর্মীদের আনুগত্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।
ওপেনএআইয়ের কর্মীদের আনুগত্যের কারণ ব্যাখ্যা করে অল্টম্যান জানান, তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে ওপেনএআই-ই একমাত্র সংস্থা যারা ‘আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স’ (AGI) অর্জনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পথে এগোচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে প্রতিভাকে কেনার চেষ্টা করলে দীর্ঘ মেয়াদে একটি সুস্থ ও কার্যকর কর্মসংস্কৃতি তৈরি হয় না।
অল্টম্যানের দাবি অনুযায়ী, মেটা ওপেনএআইয়ের একজন প্রধান গবেষক নোয়াম ব্রাউন এবং গুগলের এআই রূপকার কোরায় কাভুকচুগলুকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল, তবে সেই চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি।
মেটার এআই অগ্রগতির সমালোচনা:
পডকাস্টে অল্টম্যান মেটার বর্তমান এআই অগ্রগতিকে ‘হতাশাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “তাদের চেষ্টাগুলো খুব একটা সফল হয়নি। ওরা উদ্ভাবনের দিক থেকে খুব একটা এগিয়ে নেই।” এই ধরনের সরাসরি সমালোচনা এআই শিল্পের উচ্চ-স্তরের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকেই তুলে ধরছে।
মেটার পাল্টা চাল ও চ্যালেঞ্জ:
তবে মেটা বসে নেই। সম্প্রতি তারা স্কেল এআইয়ের সাবেক সিইও আলেক্সান্ডার ওয়াংয়ের নেতৃত্বে একটি নতুন সুপার ইন্টেলিজেন্স টিম গঠন করেছে এবং ওয়াংয়ের পুরোনো সংস্থায় বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। গুগল ডিপমাইন্ডের জ্যাক রেই এবং সেসেম এআইয়ের জোহান শালকউইকসহ কিছু নামকরা গবেষক ইতিমধ্যে মেটায় যোগ দিয়েছেন, যা তাদের এআই গবেষণাকে শক্তিশালী করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে মেটার এই নতুন টিম গড়ার লড়াই মোটেই সহজ হবে না। কারণ, ওপেনএআই, গুগল ডিপমাইন্ড এবং অ্যানথ্রপিকের মতো প্রতিযোগীরাও নিজেদের এআই প্রকল্প নিয়ে দারুণ গতিতে এগোচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, সামনের মাসগুলোতে ওপেনএআই এমন একটি ‘ওপেন মডেল’ উন্মুক্ত করতে পারে, যা এআই দৌড়ে মেটাকে আরও পিছিয়ে দেবে।
এআই-ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া ফিডের ভাবনা:
পডকাস্টে অল্টম্যান আরও একটি আকর্ষণীয় তথ্য দেন। ওপেনএআই এআই-ভিত্তিক এক নতুন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া ফিড তৈরির কথা ভাবছে, যেখানে বর্তমান অ্যালগরিদমিক পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী কনটেন্ট সাজানো হবে। যদিও মেটা ইতিমধ্যে তার ‘মেটা এআই’ অ্যাপের মাধ্যমে এআই-ভিত্তিক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সেবা চালু করেছে, তবে এটি এখনো খুব একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এই নতুন প্রচেষ্টা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করতে পারে।
সব মিলিয়ে, এআই শিল্পে প্রযুক্তি, প্রতিভা এবং কৌশলগত বিনিয়োগের এই তুমুল প্রতিযোগিতা আগামী দিনে ডিজিটাল বিশ্বকে কীভাবে নতুনভাবে সাজিয়ে তোলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ