কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে তৈরি ভিডিও বা ‘ডিপফেইক’ কনটেন্ট দিন দিন এতটাই উন্নত হচ্ছে যে, কোনটি আসল আর কোনটি নকল, তা বোঝা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই বিভ্রান্তি দূর করতে এবং এআই-জেনারেটেড ভিডিও শনাক্ত করার কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে সম্প্রতি প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ‘মেইক ইউজ অফ’ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপফেইক প্রযুক্তি এখন শুধু মুখের ভাবভঙ্গি বা ব্যাকগ্রাউন্ডে অদ্ভুত ছায়ার মতো বিষয়গুলো দেখে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। এআই দিয়ে তৈরি কিছু ভিডিও বা ছবি এমন নিখুঁতভাবে তৈরি হয়, যা প্রথম দেখায় অবিশ্বাস করার মতো নয়। তাই এমন কনটেন্ট শনাক্ত করতে প্রয়োজন কিছু বিশেষ টুল ও কৌশল।
বিনামূল্যের ডিপফেইক ডিটেক্টর: ‘ডিপওয়্যার’
এআই ভিডিও শনাক্ত করার জন্য একটি অত্যন্ত কার্যকরী এবং সবচেয়ে ভালো দিক হলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উপলব্ধ টুল হলো ‘ডিপওয়্যার’।
কীভাবে ব্যবহার করবেন ডিপওয়্যার:
প্রথমে ডিপওয়্যারের ওয়েবসাইটে (deepware.ai) যান।
এরপর ‘গো টু স্ক্যানার’ অপশনে ক্লিক করুন।
যে ভিডিওটি পরীক্ষা করতে চান, সেটি সরাসরি আপনার ল্যাপটপ বা ফোন থেকে আপলোড করতে পারেন, অথবা ভিডিওটির লিংক দিতে পারেন।
ভিডিওটি আপলোড বা লিংক দেওয়ার পর সাইটটি দ্রুত বিশ্লেষণ করে ভিডিওটি সম্পর্কে মতামত জানাবে। এটি খুবই দ্রুত ও সহজে কাজ করে।
প্রিমিয়াম সুবিধার সঙ্গে ‘অ্যাটেস্টিভ ডট ভিডিও’
এআই ভিডিও শনাক্তে সাহায্য করতে পারে এমন আরেকটি প্ল্যাটফর্ম হলো ‘অ্যাটেস্টিভ ডট ভিডিও’ (attestiv.video)। এটি বিনামূল্যে এবং প্রিমিয়াম, উভয় প্ল্যানেই ব্যবহার করা যায়। বিনামূল্যের ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ পাঁচটি ভিডিও শনাক্ত করতে পারবেন এবং দুই মিনিটের বেশি দীর্ঘ ভিডিও আপলোড করতে পারবেন না।
কীভাবে ব্যবহার করবেন অ্যাটেস্টিভ ডট ভিডিও:
অ্যাটেস্টিভ ডট ভিডিওর ওয়েবসাইটে যান।
এরপর সম্পূর্ণ ফাইল বা লিংক আপলোড করে স্ক্যান শেষ হওয়ার জন্য কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন।
স্ক্যান শেষে প্ল্যাটফর্মটি একটি ‘টেকনিক্যাল সাসপিশিয়ন রেটিং’ তৈরি করবে।
এই রেটিংয়ে বেশি স্কোর আসা মানে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, আর কম স্কোর আসা মানে এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।
ভিডিও বিশ্লেষণের জন্য ‘ইনভিড’ ব্রাউজার এক্সটেনশন
‘ইনভিড’ (InVID) নামে আরও একটি টুল রয়েছে, তবে এটি ডিপফেইক ডিটেক্টরের মতো সরাসরি কাজ করে না। বরং, এটি ভিডিওর মূল বিষয়বস্তু এবং ফ্রেমগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দেয়, যা ব্যবহারকারীকে নিজেই ভিডিওটি বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। ইনভিড কোনো ওয়েবসাইট নয়, এটি ব্রাউজার এক্সটেনশন হিসেবে কাজ করে।
ইনভিড সরাসরি একটি ভিডিও আসল না নকল তা না বললেও, ভিডিওর মূল ফ্রেম ও বিভিন্ন মুখগুলোকে আলাদাভাবে দেখানোর সুযোগ করে দেয়। এর ফলে ব্যবহারকারীর পক্ষে ভিডিওর খুঁটিনাটি যাচাই করা এবং নিজেই জালিয়াতি শনাক্ত করা সহজ হয়ে যায়।
এআই প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ডিপফেইকের মতো অপব্যবহারও বাড়ছে। তাই এই ধরনের টুলগুলো ব্যবহার করে সচেতন থাকা এখন সময়ের দাবি।