
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে বিশাল বিনিয়োগের পথে হাঁটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জায়ান্ট মেটা। রোববার মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, মেটা তাদের সমর্থিত এআই স্টার্টআপ ‘স্কেল এআই’-তে এক হাজার কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করছে। এই সম্ভাব্য চুক্তি এআই খাতে মেটার আগ্রাসী মনোভাবের এক বড় ইঙ্গিত।
ব্লুমবার্গ ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চুক্তির শর্তাবলী এখনও চূড়ান্ত হয়নি এবং তাতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে স্কেল এআই বা মেটা কেউই তাৎক্ষণিক সাড়া দেয়নি।
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘স্কেল এআই’ মূলত একটি ডেটা লেবেলিং স্টার্টআপ। এটি এআই মডেলগুলোকে প্রশিক্ষিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা প্রস্তুত করে। মার্কিন চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম অ্যামাজন এবং স্বয়ং মেটার মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলো এই স্টার্টআপকে সমর্থন দিচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, ‘স্কেল এআই’ কোম্পানিটির বাজারমূল্য প্রায় এক হাজার চারশ কোটি ডলার। এই স্টার্টআপটি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করে, যেখানে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা এআই নিয়ে তথ্য ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই প্ল্যাটফর্মে বিশ্বের ৯ হাজারেরও বেশি শহরের মানুষ অংশ নিচ্ছেন বা অবদান রাখছেন।
শুধুমাত্র এআই স্টার্টআপে বিনিয়োগ নয়, মেটা তাদের ক্রমবর্ধমান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সেন্টার পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি ঘোষণা করেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় ‘কনস্টেলেশন এনার্জি’র একটি পারমাণবিক চুল্লি আগামী ২০ বছর ধরে চালু রাখতে সহায়তা করবে মেটা। এটি কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে মেটার প্রথম চুক্তি, যা তাদের দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনাকে তুলে ধরে।
ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায়, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সেন্টারের কারণে, বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন বিকল্প ব্যবস্থা নিচ্ছে। মেটার পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ তারই এক জ্বলন্ত উদাহরণ।
এআই প্রযুক্তিতে মেটার এই বিশাল বিনিয়োগ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা, প্রযুক্তি বিশ্বের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।