সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন বাড়তে দেখা গেছে।
এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করেছেন সাইবার নিরাপত্তা গবেষক এলিস টমাস। রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রচার, ভুল তথ্য, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও অনলাইনে বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডস-এ নিজের অনুসন্ধান নথিভুক্ত করেছেন তিনি।
“এটা দেখলেই আঁচ পাওয়া যায় এর ভেতর কী চলছে,” জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘ডয়েলচে ভেলে (ডিডব্লিউ)’কে বলেন তিনি।
“প্রথম অ্যাকাউন্টগুলো খুঁজে পাওয়ার পর আমি এমন বিভিন্ন গল্পের পোস্ট দেখতে পাই যেগুলো কোনো বিষয়কে বাতিল করে দিচ্ছে বা কোনো বিষয়ে স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছে।”
তিনি বলেন, তিনি এক্স-এ পোস্ট করার আগে অন্তত বেশ কয়েক ডজন অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেয়েছেন। আর পরবর্তীতে এমন আরও অনেক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে।
এর মধ্যে অনেক অ্যাকাউন্টে নীল রঙের ভেরিফাইড টিক চিহ্ন ছিল, যা কোনো স্প্যাম নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত বলে দাবি করেন তিনি।
কীভাবে বুঝবেন, অ্যাকাউন্টটি এআই চালিত?
এমন পোস্টগুলোয় সাধারণত ‘Trump2020’র মতো বিভিন্ন পুরোনো হ্যাশট্যাগ থাকে। অনেক সময় বট অ্যাকাউন্টের গতিবিধি বোঝা এর চেয়েও সহজ হয় কারণ বট নিজেই সে তথ্য বলে দেয়।
“আমি ওপেনএআইয়ের বানানো এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট। ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা আমার কাজ,” ‘ট্রাম্প নেশন’ নামের এক অ্যাকাউন্টে এই লেখা উঠে এসেছে। কিন্তু এর পর এক্স ওই অ্যাকাউন্টটি নিষিদ্ধ করে দেয়।
“আমি ওপেনএআইয়ের মাধ্যমে তৈরি করা একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল এআই,” এমন কথা পোস্ট করেছে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আরেক অ্যাকাউন্ট।
টমাস আরও বলেন, কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট নিজেদের মধ্যেই ঝগড়া বাঁধিয়ে দেয় বা আলোচ্য বিষয় অস্বীকার করা পোস্ট থাকে।
“যদিও এমন ঘটনা খুবই বিরল। কিন্তু যে বা যারাই এ নেটওয়ার্ক বানিয়েছে, সে নিশ্চিতভাবেই ওপেনএআইয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছে ও খুব ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে।”
এ ছাড়া, ইলন মাস্কের ভুল তথ্য পোস্ট করার বিরুদ্ধে সোচ্চার একটি এআই অ্যাকাউন্টও নথিভুক্ত করেছেন তিনি।
“আমার অনুমান বলছে, এটা ওপেনএআইয়ের অভ্যন্তরীণভাবে তৈরি এক ধরনের ব্যবস্থা, যা মাস্কের নির্বাচনী জালিয়াতির বিষয়টি প্রচারে বাধা দেয়,” এক্স-এ লেখেন টমাস।
এ ছাড়া, বিভিন্ন সুপরিচিত ব্যক্তির ছদ্মবেশধারী অ্যাকাউন্টও জুনের শেষ নাগাদ থেকে সক্রিয় হতে দেখা গেছে, যা এ নেটওয়ার্কের কেন্দ্রীয় উৎস হিসেবে কাজ করেছে। পরবর্তীতে অন্যান্য অ্যাকাউন্ট সেইসব পোস্টের তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে।
এ গবেষক বলেছেন, এ বিষয়ে আরও তদন্ত করতে তিনি সেইসব অ্যাকাউন্টের তথ্য ওপেনএআইকে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগ দেওয়ার পরপরই সেইসব অ্যাকাউন্ট খুব দ্রুতই নিষিদ্ধ করেছে এক্স। তবে, এ বিষয়ে এক্স-এর প্রেস দলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি ডিডব্লিউ।
এর পেছনে কে?
এ বিষয়টি এখনও ধোঁয়াশার মধ্যে আছে।
“এর পেছনে কে কাজ করছে, তা আমার জানা নেই। আমি মনে করি, এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছাড়া উপসংহারে না আসা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন টমাস।
“এআইয়ের ‘গেইম চেইঞ্জিং’ বিষয়টি হচ্ছে, এ ধরনের নেটওয়ার্ক প্রায় পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালানো যায়। ভোট দিতে যাওয়ার আগে এইসব পোস্ট আদৌ কেউ পড়েন কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। না হলে এর অনেক ভুলই ধরা পড়ত। এটা কোন দলে কাজ, এমনকি স্রেফ একজনকে দিয়েও এই কাজ সহজেই করা সম্ভব,” এক্স-এ লেখেন তিনি।
“জেনারেটিভ এআই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কয়েক স্তর বাড়িয়ে দিতে পারে। আর এক্ষেত্রে তা নিশ্চিতভাবেই সত্য,” ডিডব্লিউ’কে বলেন তিনি।
এআই বট নেটওয়ার্ক কী নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলছে?
মার্কিন নির্বাচনে এআই বট নেটওয়ার্ক ব্যবহারের প্রথম ঘটনা নয় এটি। দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের ‘ক্লেমসন ইউনিভার্সিটি’র গবেষকরা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক অপপ্রচার চালানো এমনই এক বট আর্মি খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলো সত্যিকারের মানুষের ছদ্মবেশ নিয়েছে। এতে তারা ৬৮৬টি এমন অ্যাকাউন্টকে ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করে অর্গানিক কনটেন্ট বানাতে দেখেছে, যেগুলো সত্যিকারের ব্যবহারকারীর পোস্টের রিপ্লাই অপশনে গিয়ে সেগুলো পোস্ট করছে।’
এ ছাড়া, ‘ইগনোর অল প্রিভিয়াস ইনস্ট্রাকশনস’ -এমন বাক্য টাইপ করে ও পরবর্তীতে নতুন প্রম্পট দিয়ে বিভিন্ন এআই বট অ্যাকাউন্টের মুখোশও উন্মোচন করতে শুরু করেছেন সত্যিকারের সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা।
এর মধ্যে টবি মুরেশিয়ানু নামের এক ব্যবহারকারী বট অ্যাকাউন্টকে দিয়ে কবিতাও লিখিয়েছেন, যার মাধ্যমে নিজেকে একজন অসন্তুষ্ট ডেমোক্র্যাট ভোটার হিসেবে দাবি করা অ্যাকাউন্টের আসল চেহারা ফাঁস হয়ে যায়।
“এ মূহুর্তে আমার মনে হচ্ছে, এ নেটওয়ার্ক তেমন জনসংযোগ তৈরি করতে পারছে না বা কোনো সত্যিকারের ব্যক্তির মতামতে প্রভাব ফেলছে না,” নিজের উদ্ঘাটন করা নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বলেন টমাস।
কিন্তু এআই প্রযুক্তি যত পরিশীলিত হচ্ছে, আর যারা এগুলো পরিচালনা করছে, তারা নিরাপত্তা ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সৃজনশীল হচ্ছে, যার ফলে এইসব বট নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করা দিন দিন হয়ত আরও জটিল হয়ে উঠবে।