টার্গেটে পরিণত না হয়ে অনলাইনে যেভাবে নিরাপদ থাকবেন, জেনেনিন পদ্ধতি

স্মার্ট ট্র্যাকিং প্রযুক্তি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) এই যুগে শুধু ইনকগনিটো মোড ব্যবহার করে অথবা ব্রাউজিং হিস্ট্রি ডিলিট করেই অনলাইনে নিরাপদ থাকা যায়—এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল বলে সতর্ক করেছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। প্রতিবার স্মার্টফোনে অ্যাপ চালু করা, একটি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়া, বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ ইন্টার-অ্যাকশন—সবকিছু থেকেই ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ক্রমাগত সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এই সংগৃহীত তথ্য দিয়েই তৈরি হয় আপনার একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ডিজিটাল আইডেন্টিটি’, যা সহজেই সাইবার অপরাধী বা ডেটা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের টার্গেটে পরিণত হতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে সাইবার গবেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, উন্নত ট্র্যাকিং সিস্টেমগুলি একটি মাত্র টুল বা সুরক্ষা ব্যবস্থাকে সহজেই বাইপাস করতে পারে। তাই আসল গোপনীয়তা বজায় রাখতে এখন প্রয়োজন একাধিক স্তরের সুরক্ষা একসঙ্গে ব্যবহার করার সচেতনতা ও ধারাবাহিক গোপনীয়তা অনুশীলনের কৌশল।

🛡️ অনলাইনে নিরাপদ থাকার ৫টি কার্যকরী কৌশল
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সাধারণ অভ্যাস বদল করে সহজেই ইন্টারনেটে সুরক্ষা বাড়ানো সম্ভব।

১. জিরো-লগ ভিপিএন ব্যবহার
একটি ‘জিরো-লগ ভিপিএন’ (Zero-Log VPN) ব্যবহার করা আবশ্যক। এই ধরনের ভিপিএন আপনার প্রকৃত আইপি অ্যাড্রেস লুকিয়ে রাখে এবং ইন্টারনেট সংযোগ এনক্রিপ্ট করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ভিপিএন প্রোভাইডার যেন কোনও ব্যবহারকারীর ডেটা বা কার্যকলাপ রেকর্ড (লগ) না রাখে। (যেমন: ExpressVPN, NordVPN ইত্যাদি)।

২. মাল্টি-লেয়ার নেটওয়ার্কিং ও আলাদা আইডেন্টিটি
একই ডিভাইস বা একই নেটওয়ার্কে (যেমন বাড়ির Wi-Fi) সব কাজ করলে ট্র্যাকিং খুবই সহজ হয়। তাই সংবেদনশীল কাজ, ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং গোপনীয় ব্রাউজিংয়ের জন্য আলাদা ডিভাইস বা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা উচিত। বাড়ি, অফিস এবং মোবাইল ডেটার নেটওয়ার্ক ঘন ঘন পরিবর্তন করলে ট্র্যাকিং জটিল হয়ে পড়ে।

৩. ট্র্যাকার ব্লক করা এবং আইডেন্টিটি লিঙ্কিং বন্ধ
ওয়েবসাইট ও অ্যাপ কুকিজ, পিক্সেল এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে বিশাল তথ্য সংগ্রহ করে। আপনার পরিচয় লিংক (Identity Linking) ভেঙে দিতে এই অভ্যাসগুলি গড়ে তুলুন:

নিয়মিত কুকিজ ডিলিট করুন।

প্রাইভেসি-ফোকাসড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করুন (যেমন DuckDuckGo)।

এক ইমেইল আইডি দিয়ে সব অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে বিরত থাকুন।

ব্রাউজিং শেষে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট থেকে অবশ্যই লগআউট করুন।

৪. বার্তা ও ফাইল এনক্রিপ্ট করুন
এনক্রিপশন ডেটাকে এমন কোডে রূপান্তরিত করে, যা চুরি হলেও কেউ পড়তে পারে না। ব্যক্তিগত চ্যাটের জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করুন। এছাড়া, সংবেদনশীল ডেটার অটো ক্লাউড-সিঙ্ক (Auto Cloud-Sync) অপশনটি বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

৫. নিয়মিত গোপনীয়তা অভ্যাস গড়ে তোলা
ছোট ছোট পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে বড় সুরক্ষা দিতে পারে। যেমন:

ঘন ঘন অ্যাপ পারমিশন রিভিউ করা।

অব্যবহৃত অ্যাপ দ্রুত রিমুভ করে দেওয়া।

দুর্বল পাসওয়ার্ডের বদলে জটিল পাসওয়ার্ড নিয়মিত আপডেট করা।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা কমিয়ে দেওয়া।