OMG! এই হ্যাকারকে ধরে দিলে পুরস্কার ১ কোটি ১০ লাখ ডলার, জেনেনিন পরিচয়?

তার নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি— ভলোদিমির টাইমোশচুক (Volodymyr Tymoshchuk)। কিন্তু সাইবার অপরাধ জগতে তিনিই এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক। এই ইউক্রেনীয় নাগরিকের ওপর সম্প্রতি ১ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৯১ কোটি টাকা) বিশাল অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। কারণ তিনি কোনো মাদক বা অস্ত্র চোরাকারবারি নন, বরং গত দশকে সবচেয়ে সক্রিয় র‍্যানসমওয়্যার হামলাকারী হিসেবে পরিচিত।

মার্কিন সরকারি কৌঁসুলিদের দাবি, টাইমোশচুক এমন সব সাইবার হামলার মূল হোতা, যা বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানিকে মোট এক হাজার ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

মার্কিন অ্যাটর্নি জোসেফ নোচেলা জুনিয়র তাকে ‘সিরিয়াল এক র‍্যানসমওয়্যার অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অভিযোগ বলছে, টাইমোশচুকের সাইবার হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানি কার্যত ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল।

‘ডেডফোর্জ’ (DeadForge) ও ‘বোবা’ (Boba)—এই ছদ্মনামেই পরিচিত এই হ্যাকার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশের জন্য বিশেষ সফটওয়্যার তৈরি ও পরিচালনার কাজ করতেন। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যক্তিগত ডেটা লক করে রাখা হতো এবং ডেটা মুক্তির জন্য বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ চাওয়া হতো।

  • কিছু প্রতিষ্ঠান এই মুক্তিপণ হিসেবে কয়েক লাখ ডলার পর্যন্ত দিতে বাধ্য হয়েছে।
  • আবার অনেক প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন কার্যত অচল অবস্থায় পড়ে থেকেছে, তাদের টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছিল।

টাইমোশচুকের বিরুদ্ধে সাতটি ভিন্ন গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে যুক্তরাষ্ট্র, যার প্রতিটিতেই আজীবন কারাদণ্ডের ঝুঁকি রয়েছে।

সাইবার হামলার বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও

টাইমোশচুকের সাইবার হামলার ধরন ছিল ভয়ংকর:

  • নর্স্ক হাউড্রো (Norsk Hydro) হামলা: ২০১৯ সালে নরওয়ের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি কোম্পানি ‘নর্স্ক হাউড্রো’ তার তৈরি ‘লকারগোগা’ (LockerGoga) র‍্যানসমওয়্যার হামলার শিকার হয়েছিল। এর ফলে বিশ্বের প্রায় ১৭০টি কারখানায় উৎপাদন সম্পূর্ণ থেমে যায়, যার ফলস্বরূপ কোম্পানির ক্ষতির অংক দাঁড়ায় ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার
  • মেগাকর্টেক্স (MegaCortex): টাইমোশচুকের সঙ্গে জড়িত আরেকটি র‍্যানসমওয়্যার হলো ‘মেগাকর্টেক্স’, যা আরও ভয়ংকর এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন ছিল। এটি প্রথমে কর্পোরেট নেটওয়ার্ককে টার্গেট করলেও দ্রুত সাধারণ মানুষের কম্পিউটারেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অসংখ্য সাধারণ মানুষ তাদের পারিবারিক ছবি, কাজের গুরুত্বপূর্ণ নথিসহ সবকিছুর অ্যাক্সেস হারিয়ে মুক্তিপণ দিতে বাধ্য হন।

ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও বড় সাফল্য

বহু বছর ধরে ছদ্মনাম, সার্ভারের জটিল স্তর ও আন্তর্জাতিক সীমান্তের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন টাইমোশচুক। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাল ছাড়তে রাজি ছিল না। সাইবার অপরাধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তদন্তকারীরা একসঙ্গে মিলে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।

এই যৌথ প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ২০২২ সালে, যখন তারা ‘মেগাকর্টেক্স’ এবং ‘লকারগোগা’ র‍্যানসমওয়্যারে আক্রান্ত শত শত কোম্পানিকে ফাইল আনলক করার জন্য বিনামূল্যে ‘ডিক্রিপশন কি’ সরবরাহ করতে সক্ষম হন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এখন টাইমোশচুকের মতো হ্যাকারদের আন্তর্জাতিক অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানকারীদের মতোই একই স্তরের হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। এক কোটি ১০ লাখ ডলারের এই পুরস্কার ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র কঠিন বার্তা দিচ্ছে যে, এ ধরনের সাইবার অপরাধকে তারা আর হালকাভাবে নেবে না। টাইমোশচুকের কথিত সহষড়যন্ত্রকারী এরইমধ্যে নিউ ইয়র্কে বিচারের মুখোমুখি হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই বিশাল অঙ্কের পুরস্কার দেখে কেউ না কেউ তথ্য দিয়ে টাইমোশচুককে আটক করাতে সাহায্য করবে।