বিশেষ: শনির চাঁদে থাকতে পারে প্রাণের সম্ভাবনা, জেনেনিন কি বলছে গবেষণা?

মহাকাশে প্রাণের সন্ধান শুধু মঙ্গলেই সীমাবদ্ধ নয়। সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর গবেষণায় উঠে এসেছে, শনি গ্রহের অন্যতম চাঁদ বা উপগ্রহ এনসেলাডাসেও (Enceladus) প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

বুধবার প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচ থেকে যে অণুগুলো বেরিয়ে আসছে, সেগুলো প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি জটিল। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA)-এর ড. জোর্ন হেলবার্ট এ প্রসঙ্গে বলেন, “এনসেলাডাসে প্রাণ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানের খোঁজ আমারা পেয়েছি।”

বরফের ঝর্ণায় প্রাণের সতেজ নমুনা

এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচে একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ মহাসাগর রয়েছে বলে আগেই জানা গিয়েছিল। ‘ক্যাসিনি’ (Cassini) মিশন-এর তথ্য অনুযায়ী, এই উপগ্রহের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল থেকে প্রায় ছয় হাজার মাইল ওপরে পর্যন্ত জল ও বরফের গম্বুজ আকারে ‘গিজার’ (ঝর্ণা) ছুটে যায় মহাকাশের দিকে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, এই ভূগর্ভস্থ লবণাক্ত মহাসাগরটির গভীরতা প্রায় ৩০ মাইল এবং এটি পুরো উপগ্রহটিকে ঘিরে রেখেছে।

আগেও এই বরফ কণা বিশ্লেষণে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান মিলেছিল। তবে সেই সময় শনি গ্রহের ‘ই’ রিং বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে এই জৈব যৌগের উপস্থিতি আন্দাজ করা হয়েছিল।

তবে এবারের গবেষণাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন: গবেষকরা এবার সরাসরি ক্যাসিনি মহাকাশযানের গিজারের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

নতুন আবিষ্কারের বিশেষত্ব হলো, সংগৃহীত জৈব পদার্থের বৈচিত্র্য অনেক বেশি এবং নমুনাগুলো একেবারেই ‘সতেজ’। গবেষণার প্রধান লেখক ড. নোজাইর খাজা জানিয়েছেন, “এসব কণা কেবল কয়েক মিনিট আগেই তৈরি হয়েছিল।”

গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, গিজারে সরাসরি জৈব উপাদান শনাক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে এই কণাগুলোর উৎস কেবল মহাকাশীয় আবহাওয়া বা বিকিরণ নয়, যা নমুনার গঠন পরিবর্তন করে দিতে পারে। বরং দেখা গেছে—

“এসব কণা একেবারে সতেজ ও অপরিবর্তিত। এর থেকে প্রমাণ মেলে, এসব যৌগ এনসেলাডাসের গভীর মহাসাগর থেকে গিজারের মাধ্যমে বেরিয়ে এলেও অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকতে পেরেছে।”

ড. খাজার দাবি, তারা এনসেলাডাসের ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে উঠে আসা একেবারে খাঁটি নমুনাই সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এই গবেষণার ফল এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচে থাকা বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থের জটিলতা আরও বাড়িয়েছে

যদিও এই গবেষণা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে শনি গ্রহের চাঁদ এনসেলাডাসে সত্যিই প্রাণের অস্তিত্ব আছে, তবে এটি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এর ভূগর্ভস্থ মহাসাগরে রাসায়নিক উপাদানে সমৃদ্ধ এক পরিবেশ রয়েছে— আর সেখানেই লুকিয়ে আছে প্রাণের উপাদান গঠনের বিপুল সম্ভাবনা