কম্পিউটার ধীরগতি? জেনে নিন এর কারণ ও সহজ সমাধান

ধীরগতির কম্পিউটারে বিরক্ত? এই ৫টি টিপস আপনার ল্যাপটপের গতি সুপারফাস্ট করে তুলবে!

আপনি কি দিনভর কাজের পর ল্যাপটপের ধীরগতিতে বিরক্ত? ওয়েব ব্রাউজিং হোক বা ভিডিও স্ট্রিমিং, আপনার কম্পিউটার বারবার ফ্রিজ হয়ে যায়, অ্যাপ্লিকেশন ক্র্যাশ করে বা ফাইল সেভ হতে অনেক সময় লাগে? এর কারণ হতে পারে কয়েকটি সাধারণ সমস্যা, যার সমাধান আপনার হাতের মুঠোয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পিউটারের গতি কমার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে। এগুলো হলো:

১. র‍্যাম ফুরিয়ে আসা

কম্পিউটারের প্রধান গতি নির্ধারক হলো র‍্যাম বা র্যান্ডম অ্যাকসেস মেমরি। এটি একটি অস্থায়ী মেমরি, যা প্রসেসরকে দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করে। যখন আপনি একসঙ্গে অনেকগুলো অ্যাপ্লিকেশন চালান (যেমন: একাধিক ব্রাউজার ট্যাব, স্ট্রিমিং অ্যাপ, বা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা সফটওয়্যার), তখন র‍্যাম দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এতে প্রসেসরের ওপর চাপ বাড়ে এবং কম্পিউটার ধীর হয়ে যায়।

সমাধান:

  • অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো বন্ধ করে দিন।
  • উইন্ডোজে Ctrl+Alt+Delete চেপে টাস্ক ম্যানেজার খুলে দেখুন কোন প্রোগ্রামগুলো সবচেয়ে বেশি র‍্যাম ও সিপিইউ ব্যবহার করছে।
  • ম্যাক কম্পিউটারে Activity Monitor এবং ক্রোমবুকের Task Manager ব্যবহার করেও একই তথ্য জানতে পারবেন।
  • অযথা বেশি ট্যাব খুলে রাখবেন না।
  • টেক বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকাল ৪ জিবি র‍্যাম যথেষ্ট নয়। মসৃণভাবে কাজ করার জন্য আপনার কম্পিউটারে ন্যূনতম ৮ জিবি র‍্যাম থাকা উচিত।

২. হার্ড ড্রাইভ পূর্ণ হয়ে যাওয়া

কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভ যদি প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়, তবে তার কাজ করার গতি কমে যায়। হার্ড ড্রাইভে দীর্ঘমেয়াদি ফাইল সংরক্ষণের পাশাপাশি অস্থায়ী ফাইলও জমা হয়, যা বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন চালাতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভালো পারফরম্যান্সের জন্য হার্ড ড্রাইভের অন্তত ২০% জায়গা খালি রাখা উচিত।

সমাধান:

  • অস্থায়ী ফাইলগুলো নিয়মিত ডিলিট করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইনস্টল করুন।
  • বড় ফাইলগুলো ক্লাউড স্টোরেজে (যেমন: গুগল ড্রাইভ, ওয়ানড্রাইভ) সেভ করুন।
  • পুরোনো ডিস্ক-ভিত্তিক হার্ড ড্রাইভের বদলে এসএসডি (SSD) ব্যবহার করার কথা ভাবুন, যা অনেক দ্রুত এবং দক্ষ।

৩. পুরোনো সফটওয়্যার ব্যবহার

সফটওয়্যার আপডেট শুধুমাত্র নতুন ফিচার নিয়ে আসে না, বরং এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা প্যাচ ও পারফরম্যান্স ফিক্স থাকে। নিয়মিত অপারেটিং সিস্টেম আপডেট না করলে আপনার কম্পিউটার ধীর হয়ে যেতে পারে।

সমাধান:

  • উইন্ডোজে Settings > Update & Security > Windows Update থেকে আপডেট চেক করুন।
  • ম্যাক-এ System Preferences > Updates এবং ক্রোমবুকে Settings > About Chrome OS থেকে আপনার সিস্টেম আপডেটেড আছে কি না তা নিশ্চিত করুন।

৪. ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার আক্রমণ

কম্পিউটারে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার থাকলে তা ব্যাকগ্রাউন্ডে অযাচিত প্রক্রিয়া চালিয়ে র‍্যাম ও প্রসেসরের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এতে আপনার স্বাভাবিক কাজ করার গতি কমে যায়।

সমাধান:

  • ভালো একটি অ্যান্টিভাইরাস বা অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
  • নিশ্চিত করুন যে আপনার অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারটি নিয়মিত আপডেট করা হয়।

৫. অতিরিক্ত গরম হওয়া (ওভারহিটিং)

আপনার ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ অতিরিক্ত গরম হলে তার গতি কমে যেতে পারে। আধুনিক প্রসেসরগুলো অতিরিক্ত তাপমাত্রা এড়াতে নিজে থেকেই গতি কমিয়ে দেয়, যাকে ‘থার্মাল থ্রটিং’ বলা হয়।

সমাধান:

  • বিছানা বা নরম কিছুর ওপর ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। এতে এর বায়ু চলাচল আটকে যায়।
  • কম্পিউটারের ফ্যান ও ভেন্টগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করুন। ধুলো জমে গেলে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়।
  • প্রয়োজনে কমপ্রেসড এয়ার বা কটন সোয়াব ব্যবহার করে সূক্ষ্ম অংশগুলো পরিষ্কার করতে পারেন।