সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমাবেন যেভাবে, জেনেনিন কিছু কার্যকর উপায়?

বর্তমান যুগে সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত অনেকের হাতেই থাকে স্মার্টফোন। এটি যেন জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম (Gen Z) সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে বেশি সময় ব্যয় করছে। গবেষণা অনুযায়ী, ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান, যেখানে নারীরা পুরুষদের চেয়ে ১০-২০ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করেন।

বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ, অর্থাৎ ৫.২৪ থেকে ৫.৪২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী, এখন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছেন। যদিও এটি যোগাযোগ, তথ্য আহরণ এবং নিজেদের প্রকাশ করার একটি মাধ্যম, তবুও এর অতিরিক্ত ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।

ডোপামিন আসক্তি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
যখন আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু নতুন জিনিস দেখি, আমাদের মস্তিষ্কে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়, যা ডোপামিন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোন আমাদের আনন্দ ও তৃপ্তির অনুভূতি দেয়। মাদক সেবনের সময়ও এই ধরনের ডোপামিন নিঃসৃত হয়, যা এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়। এর ফলে ভবিষ্যতে নেতিবাচক অনুভূতি, জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং একাকীত্বের মতো সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা এবং আত্মমূল্যহীনতার সমস্যাগুলো অনেকাংশে সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফল।

আসক্তি কমানোর উপায়
সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি হঠাৎ করে কমানো কঠিন হলেও কিছু উপায় অবলম্বন করলে তা সম্ভব।

১. ডিজিটাল ডিটক্স দিয়ে শুরু করুন: প্রথমে সপ্তাহে একদিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ রাখুন। ধীরে ধীরে এই সময়টা বাড়ান। এতে মন এবং মস্তিষ্ক বিশ্রাম পাবে। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।

২. নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখলে অপ্রয়োজনীয়ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকা কমে যাবে। অনেক সময় একটি নোটিফিকেশন দেখতে গিয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটিয়ে ফেলি। এই ফাঁদ থেকে বাঁচতে নোটিফিকেশন অফ রাখা জরুরি।

৩. নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন: যদি একেবারেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব না হয়, তবে এর জন্য প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন। স্মার্টফোনে থাকা ‘স্ক্রিন টাইম’ বা ‘অ্যাপ লিমিট’ ফিচার ব্যবহার করে আপনি কোন অ্যাপে কত সময় ব্যয় করছেন, তা দেখতে পারেন এবং সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারেন।

৪. অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো বাস্তব জীবনে নিজেকে ব্যস্ত রাখা। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, গার্ডেনিং, গান শোনা, আঁকাআঁকি শেখা, হাঁটাচলা বা কোনো খেলাধুলায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। এতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের প্রয়োজনটাই আর মনে হবে না।