গেমিংয়ে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ে যা বলল মাস্টারকার্ড, দেওয়া হলো কড়া নির্দেশ

সম্প্রতি কিছু ভিডিও গেমের বাজারজাতকরণ বন্ধ হয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, গেমের ভেতরে আপত্তিকর কনটেন্ট থাকার কারণে পেমেন্ট কার্ড কোম্পানিগুলো এসব গেম নিষিদ্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক কার্ড প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে, তবে গেমিং প্ল্যাটফর্ম স্টিম এবং ইচ.আইও-এর ভিন্ন বক্তব্য এই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

মাস্টারকার্ডের অবস্থান

গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে মাস্টারকার্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, “মিডিয়ায় যেভাবে প্রকাশ হয়েছে, বাস্তবতা তেমন নয়। আমরা কোনো গেম মূল্যায়ন করিনি বা কোনো গেম নির্মাতা সাইট বা প্ল্যাটফর্মে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেইনি।” তারা আরও যোগ করে, “আমরা শুধু এটুকু নিশ্চিত করতে বলেছি, যাতে মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে অবৈধ লেনদেন না হয়।” অর্থাৎ, তাদের মতে, তাদের উদ্দেশ্য কেবল অবৈধ লেনদেন রোধ করা, কোনো গেম নিষিদ্ধ করা নয়।

বিতর্কের সূত্রপাত ও গেমিং প্ল্যাটফর্মের পদক্ষেপ

এই ঘটনার সূত্রপাত একটি অস্ট্রেলিয়ান প্রতিষ্ঠানের খোলা চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে মাস্টারকার্ড, ভিসা, পেপালসহ অন্যান্য পেমেন্ট কোম্পানির নির্বাহীদের কাছে অনুরোধ জানানো হয় যেন তারা ‘নো মার্সি’-এর মতো গেম বিক্রি বন্ধ করে দেয়। কারণ এসব গেমে ধর্ষণ, অজাচার এবং শিশু নির্যাতনের মতো অপরাধমূলক কনটেন্ট দেখানো হয়।

এর কয়েক সপ্তাহ পরই গেমিং প্ল্যাটফর্ম স্টিম ঘোষণা করে যে, তারা এমন সব গেম নিষিদ্ধ করবে, যেগুলো তাদের পেমেন্ট নেটওয়ার্ক ও ব্যাংক সহযোগীদের নিয়মের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। একইসঙ্গে আরেক গেমিং সাইট ইচ.আইও (itch.io) জানায়, তারা তাদের সার্চ ও ব্রাউজ পেজ থেকে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট যুক্ত গেম সরিয়ে নিচ্ছে এবং এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে।

মাস্টারকার্ড ও ভ্যালভের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

 

মাস্টারকার্ড তাদের অবস্থান পরিষ্কার করলেও, স্টিমের মালিকানা প্রতিষ্ঠান ভ্যালভ (Valve) ভিন্ন কথা বলছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, “আমরা মাস্টারকার্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। তারা পেমেন্ট প্রসেসর ও ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়, সেখান থেকে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়।”

ভ্যালভ আরও অভিযোগ করে, “আমরা ২০১৮ সাল থেকেই চেষ্টা করছি এমন গেম সরবরাহ করতে, যেগুলো আইনত বৈধ। কিন্তু আমাদের এই নীতিমালাও মাস্টারকার্ড-সংযুক্ত ব্যাংক ও পেমেন্ট প্রসেসররা গ্রহণ করেনি।” তারা আরও উল্লেখ করে যে, পেমেন্ট প্রসেসররা ‘মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ড ঝুঁকিতে পড়বে’ এমন লেনদেনের কথা উল্লেখ করে গেমগুলো নিষিদ্ধ করতে বলে।

ইচ.আইও এবং স্ট্রাইপের ব্যাখ্যা

এদিকে, ইচ.আইও জানিয়েছে যে, তারা এখন কিছু বিনামূল্যের অ্যাডাল্ট গেম পুনরায় তালিকাভুক্ত করছে এবং পেমেন্ট সেবা প্রতিষ্ঠান স্ট্রাইপ (Stripe)-এর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। স্ট্রাইপ এই বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানায়, “আমরা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট সমর্থন করতে পারি না। কারণ আমাদের ব্যাংকিং পার্টনারদের নীতিমালা এতে বাধা দেয়।”

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আপত্তিকর কনটেন্টযুক্ত গেমের বাজারজাতকরণ এবং পেমেন্ট পরিষেবা প্রদানকারীদের মধ্যে এক জটিল টানাপোড়েন চলছে। পেমেন্ট কোম্পানিগুলো একদিকে নিজেদের ব্র্যান্ডের ঝুঁকি এড়াতে চাইছে, অন্যদিকে গেম ডেভেলপার ও প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের নীতিমালা এবং আইনি বৈধতার উপর জোর দিচ্ছে। এই বিতর্কের জল কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।