AI-ভিডিও ঘিরে বিভ্রান্তি, প্রতারকদের ফাঁদ থেকে হয়ে যান সাবধান

ফিলিপাইনের সামাজিক কল্যাণ বিভাগ (DSWD) সম্প্রতি একটি গুরুতর সতর্কবার্তা জারি করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওকে তারা “সম্পূর্ণ ভুয়া” আখ্যা দিয়েছে। এই ভিডিওগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, সরকার থেকে দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য “শিক্ষা সহায়তা ভাতা” প্রদান করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কোনো সরকারি কর্মসূচি চালু নেই। বরং এই ভিডিওগুলো তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে, যাতে রয়েছে সুস্পষ্ট ভিজ্যুয়াল ত্রুটি, জাল ওয়াটারমার্ক এবং ভুয়া ওয়েবসাইটের লিংক।

ভুয়া ভিডিওর বিবরণ
গত ৯ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি স্কুল ক্যাম্পাসের মাঠে DSWD-এর লোগোযুক্ত টি-শার্ট পরা একজন ব্যক্তি ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি জানান, দেশের সব শিক্ষার্থীকে শ্রেণিভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হবে এবং এর জন্য একটি অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে হবে। ভিডিওটিতে সুপারইম্পোজড লেখা ছিল— “শিক্ষা সহায়তা বিতরণ শুরু ১২ জুলাই থেকে।”

ভিডিওটিতে DSWD এবং শিক্ষা বিভাগের লোগোও জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে এটি একটি সরকারি উদ্যোগ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে ফেসবুক ক্যাপশনে ইংরেজি ও টাগালগ ভাষায় লেখা ছিল: “DSWD education cash assistance for everyone in school।” এর সঙ্গে যুক্ত ছিল একটি রেজিস্ট্রেশন লিংক।

AI প্রযুক্তির অপব্যবহার
এএফপি (AFP) জানিয়েছে, এই ভুয়া ভিডিওগুলো গুগল-এর ভিও (Vio) প্ল্যাটফর্মের ওয়াটারমার্ক বহন করছে। ভিও হলো গুগলের একটি ভিডিও জেনারেটিং টুল, যার মাধ্যমে আট সেকেন্ডের ছোট ছোট ভিডিও তৈরি করা যায়। ভিডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই ভিডিওটি তিনটি আট সেকেন্ডের AI-জেনারেটেড ক্লিপ একত্রে জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। একটি উল্লেখযোগ্য ভিজ্যুয়াল ত্রুটি হলো— স্পিকারের পেছনে হাঁটা দুই শিক্ষার্থী ধীরে ধীরে একে অপরের সঙ্গে “মিশে যাচ্ছে”, যা AI ভিডিওতে প্রায়শই দেখা যায়। এটি AI ব্যবহারের একটি সাধারণ ত্রুটি।

সরকারি প্রতিক্রিয়া এবং সচেতনতা বার্তা
DSWD তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ১১ জুলাই একটি পোস্টে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, “এই ভিডিও ও পোস্টগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া। শিক্ষার্থীদের সরাসরি নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার মতো কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই।” বরং DSWD-এর একটি প্রকৃত কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে জানানো হয় যে, যারা দরিদ্র শিক্ষার্থী তাদের জন্য “টিউটরিং বিনিময়ে সহায়তা” দেওয়া হয়। অর্থাৎ, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা ছোটদের পড়ানোর পর মূল্যায়নের ভিত্তিতে সহায়তা পেয়ে থাকে।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও ১৭ জুলাই তাদের অফিসিয়াল পেজ থেকে স্পষ্টভাবে জানায়, “AI তৈরি ভিডিও দিয়ে ছড়ানো এই তথাকথিত শিক্ষা ভাতা সহায়তার খবর একেবারেই ভুয়া। এগুলোতে বিভ্রান্ত না হতে অনুরোধ করছি।”

ভবিষ্যতের বিপদ এবং নাগরিকদের করণীয়
বিশ্লেষকরা বলছেন, AI প্রযুক্তির এই ধরনের অপব্যবহার ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সাধারণ মানুষ, বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা শিক্ষার্থীরা সহজেই এমন ভুয়া প্রচারণার শিকার হতে পারেন। কারণ এই ধরনের ভিডিওতে বাস্তবের মতো দৃশ্য এবং প্রাতিষ্ঠানিক লোগো ব্যবহার করা হয়, যা বিভ্রান্তি ছড়াতে অত্যন্ত কার্যকর।

এই ঘটনার মাধ্যমে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন সুফল বয়ে আনতে পারে, তেমনি প্রতারণার নতুন পথও খুলে দিতে পারে। তাই নাগরিকদের উচিত— সরকারি সহায়তা বা যেকোনো স্কিম সম্পর্কিত তথ্য যাচাই না করে কোনো লিংকে ক্লিক না করা এবং যথাসম্ভব সরকারি উৎস থেকে তথ্য নিশ্চিত হওয়া। এমনকি পরিচিত কেউ কোনো তথ্য শেয়ার করলেও চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস না করে যাচাই করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।