AI-দিয়ে উত্তেজক ভিডিও বানিয়ে সেলিব্রিটি, সাঁচীর জীবনে প্রেমিকের এক ভয়াল থাবা

আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তা আবারও প্রমাণিত হলো আসামের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায়। এক গৃহবধূর ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করে তার প্রাক্তন প্রেমিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে একটি ভুয়া ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল তৈরি করেন, যা রাতারাতি ‘বেবিডল আর্চি’ নামে ১৪ লক্ষ ফলোয়ারের কাছে পরিচিতি পায়। এই ঘটনার নেপথ্যে ছিল প্রতিশোধের উদ্দেশ্য।

হঠাৎ করে ভাইরাল হওয়া ‘বেবিডল আর্চি’র আকর্ষণীয় ছবি এবং ভিডিওগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলে। বিশেষত, রোমানিয়ান গানে তার নাচের একটি ভিডিও এবং আমেরিকান অ্যাডাল্ট ফিল্ম স্টার কেন্দ্রা লাস্টের সঙ্গে তার একটি ছবি ভাইরাল হওয়ার পর তার ফলোয়ারের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। অসংখ্য ফ্যান পেজ এবং মিম তৈরি হয়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার আড়ালে ছিলেন ডিব্রুগড়ের এক গৃহবধূ, সাঁচী। তার সাবেক প্রেমিক, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার প্রীতম বোরা, সাঁচীর ব্যক্তিগত ছবি এবং এআই টুল ব্যবহার করে এই ভুয়া প্রোফাইলটি তৈরি করেন।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে যখন সাঁচীর ভাই পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। ডিব্রুগড় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিজল আগরওয়াল বিবিসিকে জানান, সাঁচী এবং প্রীতমের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ার পর প্রতিশোধ নিতেই প্রীতম এই কাজটি করেন। প্রীতম বোরা, যিনি নিজে থেকেই এআই নিয়ে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন, তিনি সাঁচীর ব্যক্তিগত ছবি বিকৃত করে প্রথমে কিছু পোস্ট করেন। পরে চ্যাটজিপিটি এবং ডিজাইনের মতো টুল ব্যবহার করে ডিপফেক ছবি এবং ভিডিও তৈরি করে অ্যাকাউন্টটি নিয়মিত আপডেট করতে থাকেন। এই প্রোফাইল থেকে তিনি প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আয় করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সবচেয়ে মর্মান্তিক বিষয় হলো, সাঁচী এই পুরো ঘটনাটি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। কারণ তিনি নিজে সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় নন এবং প্রীতম তার পরিবারের সবাইকে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিয়েছিলেন। ভাইরাল হওয়ার পরেই পরিবারের সদস্যরা এই বিষয়টি জানতে পারেন। পুলিশ ইনস্টাগ্রামের কাছে তথ্য চাওয়ার পর প্রীতম বোরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ তার ল্যাপটপ, মোবাইল, হার্ড ড্রাইভ এবং ব্যাংক সংক্রান্ত নথি বাজেয়াপ্ত করেছে।

আইনজীবী মেঘনা বলের মতে, সাঁচীর সঙ্গে যা ঘটেছে তা ‘ভয়ঙ্কর এবং প্রতিরোধ করা প্রায় অসম্ভব’। যদিও প্রীতম বোরার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, মানহানি, জালিয়াতি এবং সাইবার অপরাধের বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে, তবু ইন্টারনেট থেকে তার সব চিহ্ন মুছে ফেলা কঠিন। এই ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং অনেকে এই ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় কঠোর আইনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনি ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমনি যারা এই ধরনের কন্টেন্ট দেখেন, তাদেরও উচিত এগুলো সাইবার ক্রাইম পোর্টালে রিপোর্ট করে সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা।

প্রীতম বোরার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে যে, প্রযুক্তি যেমন আশীর্বাদ হতে পারে, তেমনি তার অপব্যবহার মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিতে পারে।