নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি, পেন্টাগনের ক্লাউড থেকে চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের সরাচ্ছে মাইক্রোসফট

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনকে ক্লাউড সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের ওপর আর ভরসা করবে না মার্কিন সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। শুক্রবার কোম্পানিটি তাদের অভ্যন্তরীণ নিয়ম-কানুনে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। এই পরিবর্তনের আওতায়, চীনের ইঞ্জিনিয়াররা এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতের ক্লায়েন্টদের জন্য ক্লাউড সেবায় কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে পারবেন না বলে আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি জানিয়েছে।
মাইক্রোসফট এই পরিবর্তনগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যে’ অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ মাইক্রোসফটের অন্যতম বৃহৎ গ্রাহক, যেখানে মাইক্রোসফট ক্লাউড পরিষেবা প্রদান করে। ‘প্রোপাবলিকা’ নামের একটি গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী রিপোর্টে এমন বিষয় প্রকাশের পর মাইক্রোসফট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, এই খাতে চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মাইক্রোসফটের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা ফ্র্যাঙ্ক শ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, “এ সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের তদারকিতে কাজ করা বিদেশি ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে যে উদ্বেগ জেগেছে তার সমাধানে সেবাদাতা হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জন্য আমাদের সাপোর্ট ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছি। যাতে নিশ্চিত করা যায়, চীনে থাকা কোনো ইঞ্জিনিয়ার আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্লাউড বা এ সংশ্লিষ্ট সেবায় প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছেন না।”
অ্যাজিউর ক্লাউড সার্ভিসে প্রভাব ও সরকারি চুক্তি
মাইক্রোসফটের এই পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি তাদের অ্যাজিউর ক্লাউড সার্ভিস বিভাগে গিয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফটের মোট আয় বা রাজস্বের ২৫ শতাংশের বেশি তৈরি হয় এই বিভাগ থেকে। এর মানে হল, অ্যাজিউর বর্তমানে মার্কিন সার্চ জায়ান্ট গুগল ক্লাউডের চেয়ে বড় হলেও, মার্কিন ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেসের চেয়ে ছোট অবস্থানে রয়েছে।
মাইক্রোসফট তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক আয়ের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, তারা সরকারি চুক্তি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় করে থাকে। এছাড়াও, কোম্পানিটির সাত হাজার কোটি ডলারের প্রথম-ত্রৈমাসিক আয়ের অর্ধেকেরও বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রাহকদের কাছ থেকে।
উল্লেখযোগ্য, ২০১৯ সালে মাইক্রোসফট এক হাজার কোটি ডলারের একটি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ক্লাউড চুক্তি জিতেছিল, যদিও আইনি লড়াইয়ের কারণে ২০২১ সালে পেন্টাগন সেই চুক্তি বাতিল করে। এরপর ২০২২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর অ্যামাজন, গুগল, ওরাকল এবং মাইক্রোসফট – এই চার কোম্পানিকে মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার কোটি ডলারের ক্লাউড চুক্তি দিয়েছিল।
নজরদারি ও ঝুঁকির অভিযোগ
প্রোপাবলিকার প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে যে, মাইক্রোসফটের চীনা অ্যাজিউর ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা কিছু ‘ডিজিটাল এসকর্ট’ বা তত্ত্বাবধায়কের মাধ্যমে নজরদারি করা হয়। তবে, এই ‘ডিজিটাল এসকর্ট’দের প্রযুক্তিগত দক্ষতা সাধারণত ওইসব চীনা প্রকৌশলীর চেয়ে কম। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যে, এই ব্যবস্থার ফলে চীন থেকে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়তে পারে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সবকিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন।
শুক্রবার এক এক্স পোস্টে প্রকাশ পাওয়া ভিডিওতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, “বিষয়টি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে বর্তমানের ডিজিটাল হুমকিপূর্ণ পরিবেশে।” তিনি এই ধরনের ব্যবস্থাকে প্রায় ‘এক দশক আগে ওবামা প্রশাসনের সময়ে তৈরি এক উত্তরাধিকার ব্যবস্থা’ হিসাবেও বর্ণনা করেছেন। হেগসেথ আরও জানিয়েছেন যে, এই ধরনের আরও ঝুঁকিপূর্ণ কার্যকলাপ আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে এখন পুরো সিস্টেম পর্যালোচনা করবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে, মাইক্রোসফট প্রথমে প্রোপাবলিকা’কে জানিয়েছিল যে, তাদের কর্মী ও ঠিকাদাররা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিয়মকানুন মেনেই কাজ করছেন। নতুন এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।