ইউটিউবের মনিটাইজেশন নীতিতে বড় পরিবর্তন, এই মুহূর্তে যা জানা দরকার

অনলাইনে শীর্ষ ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউব তাদের মনিটাইজেশন নীতিতে (Monetization Policy) বড় ধরনের আপডেট আনার ঘোষণা দিয়েছে, যা ‘ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম’ (YPP)-এর আওতায় কার্যকর হবে। এই পরিবর্তনগুলি বিশেষ করে নতুন নির্মাতাদের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে, যারা বেশি করে AI টুল, রিঅ্যাকশন ফরম্যাট বা ক্লিপ কম্পাইলেশন ব্যবহার করেন। প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এমএসএন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকেই এই নতুন নিয়মগুলো কার্যকর হতে চলেছে।

মনিটাইজেশন নীতিতে কী পরিবর্তন হচ্ছে?
ইউটিউব বলছে, এই আপডেটের মূল উদ্দেশ্য হলো নকল বা ভুয়া এবং বড় সংখ্যায় তৈরি হওয়া কনটেন্টকে (Mass-produced content) আরও ভালোভাবে শনাক্ত করা। প্ল্যাটফর্মটি স্পষ্ট করেছে যে, নতুন এই নিয়মগুলি রিঅ্যাকশন বা কম্পাইলেশন ভিডিওর ওপর কোনো সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা নয়, বরং প্ল্যাটফর্মে থাকা মনিটাইজেশনের বিভিন্ন মানদণ্ডকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা।

ইউটিউবের সম্পাদকীয় প্রধান রেনে রিচি বলেছেন, “ইউটিউবের দীর্ঘদিনের YPP নীতিতে এটি একটি ছোট আকারের আপডেট, যা আমাদের শনাক্ত করতে সাহায্য করবে কখন কোনো কনটেন্ট বড় সংখ্যায় বা বারবার তৈরি করা হয়েছে।”

নির্মাতাদের জন্য এর মানে কী?
ভবিষ্যতে রিঅ্যাকশন ভিডিও বা কম্পাইলেশনের মধ্যে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকতে হবে, যেমন নিজস্ব মন্তব্য, সম্পাদনা বা কনটেন্টের নতুন রূপান্তর। একইভাবে, টিউটোরিয়াল বা ব্লগ তৈরির বিভিন্ন চ্যানেলে কেবল পুরানো ক্লিপ, স্টক ভিডিও বা টেক্সট-টু-স্পিচ ভয়েসওভারের ওপর নির্ভর করতে পারবেন না নির্মাতারা।

এই আপডেটের মাধ্যমে বাড়তে থাকা AI-এর মাধ্যমে তৈরি বিভিন্ন ভিডিওকেও টার্গেট করছে ইউটিউব। যেসব চ্যানেল মানুষের সহযোগিতা ছাড়া কেবল AI কনটেন্টের ওপর বেশি নির্ভর করে তৈরি, তারা নিজেদের মনিটাইজেশন হারাতে পারে। এর অর্থ হলো, ইউটিউব এখন আরও বেশি গুণগত মান, সৃজনশীলতা এবং মৌলিকত্বকে গুরুত্ব দেবে।

পরিবর্তনের পরও যা একই থাকছে
ইউটিউব মনিটাইজেশনের মূল শর্তগুলো একই রয়েছে। নির্মাতাদের এখনও ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে আবেদন করতে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে:

১ হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে।

গত ১২ মাস বা এক বছরে পাবলিকলি দেখা বিভিন্ন ভিডিওর মোট ভিউ সময় ৪ হাজার ঘণ্টা হতে হবে।

গত ৯০ দিনে ১ কোটি বৈধ শর্টস ভিউ থাকতে হবে।

কেন এই পরিবর্তন আনল ইউটিউব?
ইউটিউব মনিটাইজেশন নীতিতে এসব পরিবর্তন এমন সময়ে এলো যখন অনেক ফেইসলেস বা মুখবিহীন AI-নির্ভর চ্যানেলের পরিমাণ বাড়ছে, যা ভিডিওর গুণগত মানের বদলে পরিমাণকে বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এসব চ্যানেল অনেক সময় সত্যিকারের প্রচেষ্টা বা সৃজনশীলতা ছাড়া পুরানো কনটেন্ট পুনরায় ব্যবহার করে।

ইউটিউব বলছে, নতুন পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো সত্যতা, সৃজনশীলতা ও নিজস্ব অবদানের জন্য নির্মাতাদের পুরস্কৃত করা। প্ল্যাটফর্মটির মূল উদ্দেশ্যের দিকে ফিরে যাওয়ার এটি একটি সংকেত, যেখানে কনটেন্টে নির্মাতাদের কণ্ঠস্বর, ব্যক্তিত্ব ও আবেগই কেবল প্রতিফলিত হবে।