বিদ্যুৎ ছাড়াই কাজ করবে নতুন কুলিং প্রযুক্তি!-জেনেনিন কি বলছে বিজ্ঞানীরা?

ক্লাউড কম্পিউটিং এবং বিগ ডেটা অ্যানালাইসিসের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিশ্বজুড়ে ডেটা সেন্টারগুলোর ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। এই ডেটা সেন্টারগুলোর সার্ভার থেকে উৎপন্ন বিপুল পরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে বর্তমানে মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রায় ৪০ শতাংশ খরচ হয়। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই খরচ দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে, যা পরিবেশ এবং অর্থনীতি উভয় ক্ষেত্রেই এক বড় চ্যালেঞ্জ।
এই গুরুতর সমস্যার সমাধানে অভিনব এক পথ দেখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা উদ্ভাবন করেছেন এমন এক বিপ্লবী কুলিং প্রযুক্তি, যা ঠিক মানুষের ঘামের মতোই কাজ করবে! অর্থাৎ, যেভাবে আমাদের শরীর অতিরিক্ত গরমে ঘাম ঝরিয়ে নিজেকে ঠান্ডা রাখে, ঠিক তেমনি এই নতুন প্রযুক্তি কোনো বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ ছাড়াই ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে শীতল রাখবে।
‘প্যাসিভ কুলিং’: পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী
এই যুগান্তকারী প্রযুক্তির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্যাসিভ কুলিং’। এতে ব্যবহৃত হয়েছে এক ধরনের অত্যন্ত পাতলা ফাইবারযুক্ত ঝিল্লি, যার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র। এই ছিদ্রগুলোর মধ্য দিয়ে ঠান্ডা তরল উপাদান ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে যন্ত্র থেকে তাপ শোষণ করে বাইরে বের করে দেয়। এর ফলে, যন্ত্র ঠান্ডা রাখতে কোনো বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না, যা প্রচলিত কুলিং সিস্টেমের তুলনায় অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।
গবেষকদের দাবি, এই প্রযুক্তি প্রতি বর্গসেন্টিমিটারে ৮০০ ওয়াটের বেশি তাপ অপসারণ করতে সক্ষম। এটি এখন পর্যন্ত প্যাসিভ কুলিং পদ্ধতিতে অর্জিত সর্বোচ্চ দক্ষতা, যা এই প্রযুক্তির কার্যকারিতার এক নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
‘প্রচলিত পদ্ধতির চেয়েও বেশি কার্যকর’
এই অভিনব কুলিং প্রযুক্তির উদ্ভাবক, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক রেনকুন চেন বলেন, “এটি প্রচলিত বায়ু বা তরলভিত্তিক কুলিং সিস্টেমের চেয়েও বেশি কার্যকর এবং অনেক কম শক্তি ব্যবহার করে।” তাঁর এই মন্তব্য প্রযুক্তিটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন করার পর, গবেষক দল এখন একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, ডেটা সেন্টার এবং শক্তিশালী কম্পিউটারগুলোকে সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে শীতল রাখা। এই ‘ঘামের প্রযুক্তি’ যদি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়, তবে এটি বিশ্বজুড়ে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় এক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে, যা প্রযুক্তির দুনিয়ায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।