ভুলে ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করে ফেললে যা করবেন, জেনেনিন বিপদ থেকে বাঁচার উপায়

বর্তমান ডিজিটাল যুগে আমাদের জীবন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, স্মার্টফোন, কম্পিউটার সবকিছুতেই জড়িয়ে আছে। দুঃখজনকভাবে, হ্যাকারদের তৎপরতাও সমানভাবে বাড়ছে। বিভিন্ন ফিশিং লিঙ্কের মাধ্যমে তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার জাল বুনছে, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এক বড় মাথাব্যথা।

ফিশিং লিঙ্ক কী ও কীভাবে কাজ করে?

ফিশিং লিঙ্ক হলো এক ধরনের সাইবার আক্রমণ, যেখানে সাইবার অপরাধীরা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ ইত্যাদি চুরি করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে। এই লিঙ্কগুলো সাধারণত ই-মেইল বা বিভিন্ন মেসেজিং অ্যাপের (যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম) মাধ্যমে পাঠানো হয়। লিঙ্কগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন সেগুলো কোনো বিশ্বস্ত উৎস (যেমন ব্যাংক, পরিচিত কোম্পানি বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম) থেকে এসেছে বলে মনে হয়। অসতর্ক ব্যবহারকারীরা এই ফাঁদে পা দিলেই তাদের তথ্য চলে যায় হ্যাকারদের হাতে।

সতর্কতাই প্রথম ধাপ, কিন্তু ভুল হলে কী করবেন?

ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে নিজেকে বাঁচাতে সর্বদা সতর্ক থাকা এবং সন্দেহজনক লিঙ্কগুলোতে ক্লিক না করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে, অনেক সময় ভুলবশত এমন লিঙ্কে ক্লিক করে ফেলেন অনেকেই। এরপরই হ্যাকার আপনার ডিভাইসের দখল নিতে পারে বা আপনার ব্যক্তিগত তথ্যে অ্যাক্সেস পেয়ে যেতে পারে। যদি আপনি ভুল করে কোনো ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করেই ফেলেন, তবে প্রথমে নিশ্চিত করুন যে আপনি সেখানে কোনো ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন, পাসওয়ার্ড বা ক্রেডিট কার্ড নম্বর) দেননি। যদি দিয়ে থাকেন, তবে দ্রুত নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:

ভুল করে ক্লিক করলে যা করবেন:

১. দ্রুত সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: এটি সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। লিঙ্কটিতে ক্লিক করার পরপরই দেরি না করে আপনার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টের (ই-মেইল, ব্যাংক, সোশ্যাল মিডিয়া, শপিং সাইট ইত্যাদি) পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। মনে রাখবেন, পাসওয়ার্ড যেন শক্তিশালী এবং ইউনিক হয়।

২. ডিভাইস স্ক্যান করুন: আপনার স্মার্টফোন বা কম্পিউটারকে ম্যালওয়্যার স্ক্যান করার জন্য একটি ভালো অ্যান্টি-ভাইরাস বা অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এটি আপনার ডিভাইসে কোনো ক্ষতিকর সফটওয়্যার (ম্যালওয়্যার) ইনস্টল হয়েছে কিনা, তা খুঁজে বের করতে এবং মুছে ফেলতে সাহায্য করবে।

৩. আবারও পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন: প্রথমবার পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পর ডিভাইস স্ক্যান করে ম্যালওয়্যার অপসারণের পর, নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনার সব অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড আবার পরিবর্তন করুন। বিশেষ করে ব্যাংক ও সমাজমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড, যাতে সেখান থেকে কোনো তথ্য প্রতারকদের হাতে না যায়।

৪. হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্ট রিসেট করুন: যদি আপনার মনে হয় যে আপনার কোনো নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েই গিয়েছে, তাহলে আপনি সেই অ্যাকাউন্টটি দ্রুত রিসেট করতে পারেন। অধিকাংশ প্ল্যাটফর্মে ‘Forgot Password’ বা ‘Account Recovery’ অপশন থাকে, যা ব্যবহার করে আপনি অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারেন।

এই পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করে আপনি ফিশিং আক্রমণের সম্ভাব্য ক্ষতি অনেকটাই কমাতে পারবেন এবং আপনার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন। সর্বদা মনে রাখবেন, অনলাইন সুরক্ষায় সতর্কতা এবং দ্রুত পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।