“ভর্তি পরীক্ষা চলছে..”- সব AI টুল বন্ধ করে দিলো চীনা তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি

চীনের বার্ষিক এবং অত্যন্ত প্রতিযোগিতাপূর্ণ কলেজ ভর্তি পরীক্ষা, ‘গাওকাও’, শুরু হয়েছে গত শনিবার থেকে। এই চার দিনব্যাপী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১ কোটি ৩৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী, যাদের ভবিষ্যৎ অনেকাংশে এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে, পরীক্ষায় নকল ঠেকাতে চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এক অভিনব পদক্ষেপ নিয়েছে: তারা সাময়িকভাবে তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর বিভিন্ন টুল বন্ধ করে দিয়েছে।
ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানির এমন উদ্যোগে যারা এ বছর উন্নত এআই টুল ব্যবহার করে কিছুটা সাহায্য পাওয়ার আশা করেছিলেন, তাদের ‘গুড়ে বালি’ হয়েছে। অনলাইনে শেয়ার করা একটি স্ক্রিনশটে দেখা গিয়েছে, টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সের মালিকানাধীন ‘ডাউবাও’ অ্যাপে একজন চীনা ব্যবহারকারী পরীক্ষাবিষয়ক একটি প্রশ্ন পোস্ট করেছেন। অ্যাপটি উত্তরে জানিয়েছে, “ভর্তি পরীক্ষার সময় সংশ্লিষ্ট নির্দেশনা অনুসারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সেবা বন্ধ থাকবে।” যখন ব্যবহারকারী বলেন যে এটি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন নয়, তখনও অ্যাপটি একই উত্তর দিয়েছে, যা এআই টুলগুলোর কঠোর নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়।
একইভাবে, চীনের বাজারে নতুন আসা শীর্ষস্থানীয় জেনারেটিভ এআই টুল ‘ডিপসিক’ ব্যবহারকারীদের জানিয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সেবা বন্ধ থাকবে। কারণ, ভর্তি পরীক্ষায় “ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে” এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রকাশনা ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, টেনসেন্টের মালিকানাধীন ‘ইউয়ানবাও’, আলিবাবার ‘কুয়েন’ এবং মুনশট-এর ‘কিমি’ নামের তিনটি এআই টুলও পরীক্ষার সময় ছবি চিনে নেওয়ার ফিচার বন্ধ করে দিয়েছে। গার্ডিয়ানের মন্তব্যের অনুরোধে অবশ্য এসব কোম্পানি সাড়া দেয়নি।
এই পরিষেবা বন্ধের খবর এসেছে বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে, যারা এসব টুল ব্যবহার করে পড়াশোনা ও অ্যাসাইনমেন্ট করত। এখন তারা তা করতে পারছেন না। একজন ব্যবহারকারী চীনের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবো’তে রসিকতা করে লিখেছেন, “ভর্তি পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা, তোমরা সবাই বাজে। কারণ, তোমাদের জন্য আমি ডিপসিকে ছবি আপলোড করতে পারছি না, আমাকে এখন আবার চ্যাটজিপিটি ডাউনলোড করতে হবে, আশা করি তোমরা সবাই কমিউনিটি কলেজেই ভর্তি হবে।”
গাওকাও পরীক্ষার সময় নকল ঠেকাতে শুধু এআই টুল বন্ধ করাই একমাত্র হাতিয়ার নয়, বরং চীন আরও অনেক কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। কারণ, এই পরীক্ষা তরুণদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয়। পরীক্ষার আগেই চীনের বেশ কয়েকটি অঞ্চল ঘোষণা করেছে যে, তারা এআই নজরদারি টুল ব্যবহার করবে, যাতে পরীক্ষার সময় কেউ ‘অস্বাভাবিক আচরণ’ যেমন ফিসফিস করা বা বারবার একে অন্যের দিকে তাকালে তা ধরা যায়।
চীনের ঝিয়াংসি প্রদেশে পরীক্ষা শেষে ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করা হবে এবং যদি কেউ পরীক্ষার নিয়ম ভাঙে বা খারাপ কাজ করে, তাহলে “সংশ্লিষ্ট নিয়ম অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলে দেশটির রাষ্ট্র সমর্থিত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে। গত মাসের শেষ দিকে পরীক্ষায় প্রবেশের সময় কঠোর চেকিং ব্যবস্থা চালু করেছে চীনের কর্তৃপক্ষ, যেখানে বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ, ডিজিটাল ডিভাইসের উন্নত স্ক্রিনিং এবং রেডিও সিগন্যাল ব্লকার ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে।
চীন সরকার এমন কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে যাতে দেশের ভবিষ্যতের ভিত্তি, অর্থাৎ মেধা, সততার সাথে যাচাই করা যায় এবং গাওকাও পরীক্ষার পবিত্রতা বজায় থাকে।