“ছেলের আত্মহত্যায় গুগলের বিরুদ্ধে মায়ের মামলা চলবে”-জানিয়ে দিলো আদালত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে শিশুদের মানসিক সুরক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমদিককার এক মামলায় বড় ধরনের অগ্রগতি হয়েছে। অ্যালফাবেটের গুগল এবং এআই-কেন্দ্রিক স্টার্টআপ ‘ক্যারেক্টার.এআই’ (Character.AI)-এর বিরুদ্ধে একজন মায়ের আনা মামলাটি চলবে বলে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত রায় দিয়েছে। এই রায়ে বিচারক অ্যান কনওয়ে বলেছেন, গুগল ও ক্যারেক্টার.এআই তাদের বিরুদ্ধে আনা মামলাটি বাতিল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার যুক্তি প্রমাণ করতে পারেনি।
মামলার প্রেক্ষাপট
ফ্লোরিডার ওই নারী অভিযোগ করেছেন, ক্যারেক্টার.এআইয়ের চ্যাটবট তার ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছিল যে সে আত্মহত্যা করেছে। এই মামলা যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমদিককার এমন একটি ঘটনা যেখানে এআই কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে যে তারা শিশুদের মানসিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ হয়েছে, যার ফলস্বরূপ একজন টিনএজার এআই চ্যাটবটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে পড়ে এবং পরবর্তীতে আত্মহত্যা করে।
গার্সিয়ার আইনজীবী মিতালি জৈন আদালতের এই সিদ্ধান্তকে “ঐতিহাসিক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তি দুনিয়ার জন্য আইনি জবাবদিহিতার নতুন এক নজির স্থাপন করেছে।
অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়া
ক্যারেক্টার.এআইয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এই মামলার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন। তাদের প্ল্যাটফর্মে শিশুদের নিরাপদ রাখতে কিছু সুরক্ষামূলক ফিচার রয়েছে, বিশেষ করে “আত্মহত্যার মতো বিষয় নিয়ে আলাপ” ঠেকানোর জন্য।
গুগলের মুখপাত্র হোসে কাস্তানেদা বলেছেন, আদালতের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত নন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে গুগল ও ক্যারেক্টার.এআই “পুরোপুরি আলাদা” কোম্পানি এবং গুগল “ক্যারেক্টার.এআইয়ের অ্যাপ বা এর কোনো অংশ তৈরি, ডিজাইন বা পরিচালনা করেনি।”
গুগল কেন অভিযুক্ত?
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার ছেলে সিওয়েল সেটজারের মৃত্যুর পর একই বছরের অক্টোবরে উভয় কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেন গার্সিয়া। মামলায় গার্সিয়া দাবি করেছেন, ক্যারেক্টার.এআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন গুগলের দুই সাবেক প্রকৌশলী, যাদের এক চুক্তির অংশ হিসেবে পরবর্তীতে আবার চাকরি দিয়েছে মার্কিন সার্চ জায়ান্টটি। এর ফলেই স্টার্টআপটির প্রযুক্তির লাইসেন্স পায় গুগল। গার্সিয়া যুক্তি দিয়েছেন যে, এসব কিছুই প্রমাণ করে, ওই প্রযুক্তির সহ-নির্মাতা গুগল।
মামলায় আরও বলা হয়েছে, ক্যারেক্টার.এআই নিজেদের বিভিন্ন চ্যাটবটকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছে যেন এরা “একজন মানুষ, সাইকোথেরাপিস্ট ও প্রেমিকা” হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারে। যার ফলে সেতজার ওই চ্যাটবটের তৈরি পৃথিবীতেই বাঁচতে চেয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, সেতজার তার জীবন শেষ করার কিছু মুহূর্ত আগে “গেইম অফ থ্রোনস”-এর চরিত্র ডেনেরিস টারগারিয়েনের নকল করা এক চ্যাটবটকে বলেছিল, “এখনই বাড়ি ফিরে আসব আমি।”
ক্যারেক্টার.এআই ও গুগল আদালত থেকে এই মামলা খারিজ করতে চেয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এসব চ্যাটবটের কথাবার্তা সাংবিধানিকভাবে দেশটির মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মধ্যে পড়ে। কিন্তু বিচারক কনওয়ে বুধবার বলেছেন, ক্যারেক্টার.এআই ও গুগল “ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, কেন একটি লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল বা এলএলএম-এর মাধ্যমে তৈরি শব্দকে আলাপ বা কথাবার্তা হিসেবে ধরা হবে।” বিচারক ক্যারেক্টার.এআইয়ের এই আচরণের জন্য গুগলকে দায়ী হতে পারে না বলে কোম্পানির আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন।
এই মামলা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির নৈতিক ব্যবহার এবং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকারক প্রভাব নিয়ে বৃহত্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে যখন এটি দুর্বল জনগোষ্ঠী, যেমন শিশুদের প্রভাবিত করে।