স্টারলিংক কেন সাধারণ ইন্টারনেট থেকে আলাদা? কীভাবে কাজ করে এবং এর জনপ্রিয়তা কেন?

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা হিসেবে বিশ্বজুড়ে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে স্টারলিংক। মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স-এর এই অঙ্গসংস্থা হাজার হাজার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিয়ে চলেছে। বিশ্বের যেসব অঞ্চলে অপটিক্যাল ফাইবার পৌঁছানো কঠিন বা অসম্ভব, সেখানে স্যাটেলাইটের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের সাহায্যে স্টারলিংক খুব সহজেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে পারে।
স্টারলিংক কী এবং কীভাবে কাজ করে?
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স-এর একটি স্যাটেলাইট সমষ্টি, যা পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে (প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার উপরে) স্থাপিত হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। সাধারণ ইন্টারনেট অপটিক্যাল ফাইবার বা তারের মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করে, যেখানে স্টারলিংক সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এটি করে। জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলো পৃথিবী থেকে অনেক উপরে (প্রায় ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার) অবস্থান করে ডেটা পাঠায়, যার ফলে গতি কম হয় এবং ল্যাটেন্সি (ডেটা যেতে লাগা সময়) অনেক বেশি হয়। কিন্তু স্টারলিংকের স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি থাকায় ডেটা দ্রুত চলাচল করে, ফলে উচ্চগতি এবং কম ল্যাটেন্সি পাওয়া যায়।
২০১৫ সালে স্টারলিংক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল এবং ২০১৯ সালে এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত স্টারলিংকের প্রায় ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। এই স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৪২ মাইল (৫৫০ কিলোমিটার) উপরে কক্ষপথে ঘুরছে, যা পুরো বিশ্বকেই উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম।
স্টারলিংকের সুবিধা ও জনপ্রিয়তার কারণ
স্টারলিংকের প্রধান সুবিধা হলো এর দুর্গম এলাকায় উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার ক্ষমতা। যেসব এলাকায় প্রচলিত ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছায়নি, সেখানে স্টারলিংক একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যোগাযোগ স্থাপন অনেক সহজ হয়েছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে, যার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় ভুটানে প্রথম স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি সাধারণত ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস (মেগাবাইট পার সেকেন্ড) পর্যন্ত হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতি পান। আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে। এই উচ্চগতি এবং কম ল্যাটেন্সি অনলাইন গেমিং, ভিডিও কল এবং হাই-ডেফিনিশন স্ট্রিমিংয়ের জন্য একে আদর্শ করে তোলে।
যদিও এর পরিষেবা ব্যয়বহুল হতে পারে এবং আবহাওয়া খারাপ থাকলে গতি কিছুটা কমে যেতে পারে, তবুও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর অতুলনীয় পরিষেবা স্টারলিংককে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় করে তুলেছে। ভবিষ্যতে আরও স্যাটেলাইট স্থাপন করা হলে এর গতি এবং কভারেজ আরও উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।