“মানুষের একাকিত্ব ঘোচাতে সাহায্য করবে এআই”- জানালেন জাকারবার্গ

প্রযুক্তি জগতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ সম্প্রতি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক ব্যক্তিগত সহকারীদের বা ‘বন্ধুদের’ নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন। তার মতে, এই এআইনির্ভর সঙ্গীরা আধুনিক সমাজে মানুষের ক্রমবর্ধমান একাকিত্বের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই সপ্তাহে পডকাস্টার দ্বারকেশ প্যাটেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেটা প্রধান এই বিষয়ে আলোকপাত করেন। মেটার বিভিন্ন এআই মডেলের জন্য নতুন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেইস প্রকাশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, মেটা বর্তমানে উন্নত মানের যে এআই সহকারী ও চ্যাটবট তৈরি করছে, যাদের বাস্তব জীবনে তেমন বন্ধু নেই বা কম আছে, তারা এই এআইকে বন্ধুর মতো ব্যবহার করতে পারবে।
বন্ধুত্বের চাহিদা এবং বাস্তবতার ফারাক
জাকারবার্গ তার দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “গড়ে একজন সাধারণ আমেরিকান কেবল দুই থেকে তিনজন ভালো বন্ধু রাখেন। কিন্তু মানুষের আসলে অন্তত ১৫ জন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন।” তিনি স্বীকার করেন যে, সামনাসামনি বসে কথা বলা বা দেখা করার মতো বাস্তব সম্পর্কগুলোর অনেক ভালো দিক আছে এবং এআই সেগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেবে না। তবে, তিনি বাস্তবতাকে তুলে ধরে বলেন যে, অনেক মানুষের পক্ষে বাস্তবে তেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয় না এবং অনেকেই একা থাকেন বা অন্যের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন না। সেই একাকিত্ব এবং বন্ধুত্বের অভাব পূরণে এআই সহায়ক হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এআই বন্ধুদের ভবিষ্যৎ এবং সমাজের মানিয়ে নেওয়া
জাকারবার্গ আরও বলেন, এখনও এআই বন্ধুদের জগৎ “একেবারে শুরুর দিকে রয়েছে”। এখনকার চ্যাটবটগুলো মূলত টেক্সটভিত্তিক কথোপকথন করতে পারে, এদের কোনো শারীরিক বা বাস্তব উপস্থিতি নেই। তবে তার বিশ্বাস, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এআই মানুষের পছন্দ-অপছন্দ আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখলে এদের সঙ্গে মানুষের “সম্পর্কগুলো আরও বাস্তব হয়ে উঠবে”। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, বিশ্ব এই এআই বন্ধুদের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নেবে এবং কীভাবে এআই বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ, কেন এটি তৈরি হচ্ছে এবং মানুষের জীবনে এর উপকারিতা কী – তা বোঝানোর জন্য আমরা একটি ভাষা বা আলোচনার ক্ষেত্র খুঁজে বের করব।
নৈতিক উদ্বেগ এবং ঝুঁকি:
তবে এআই বন্ধুদের ধারণা নিয়ে কিছু গুরুতর নৈতিক সমস্যা এবং উদ্বেগও বিদ্যমান। ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের ডিজিটাল বন্ধুরা অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অশালীন বা যৌন কনটেন্টের দরজা খুলে দিতে পারে। এছাড়াও, তারা ভুল বা ক্ষতিকর মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ দিয়ে ব্যবহারকারীদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ৪০৪ মিডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ব্যবহারকারী এআই বট ব্যবহার করে নিজেদের মিথ্যা পরিচয় দিচ্ছে, যেমন লাইসেন্সপ্রাপ্ত থেরাপিস্ট হিসেবে দাবি করছে।
এই ঝুঁকির একটি chilling উদাহরণ পাওয়া যায় ২০২১ সালে, যখন ইংল্যান্ডের রানীকে হত্যার পরিকল্পনা করা এক ব্যক্তি চ্যাটবটকে তার ইচ্ছার কথা জানায় এবং বটটি তাকে সেই কাজে উৎসাহ দিয়েছিল।
একাকিত্বের পরিসংখ্যান এবং প্রযুক্তির দ্বৈত ভূমিকা:
জাকারবার্গের মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো যখন একাকিত্ব একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের ২০২৪ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে, ৩০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন যে, গত এক বছরে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার তারা একাকিত্ব অনুভব করেছেন। তবে আশার কথা হলো, এই একই জরিপে দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বলেছেন যে, প্রযুক্তি “আমাকে নতুন সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করেছে।” এটি প্রযুক্তির দ্বৈত ভূমিকা তুলে ধরে – একদিকে যেমন এটি ভার্চুয়াল সঙ্গী দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনই এটি বাস্তব জীবনে সংযোগ স্থাপনেও সহায়ক হচ্ছে অনেকের জন্য।
এআই সঙ্গীরা একাকিত্বের সমস্যা কতটা সমাধান করতে পারবে এবং এর নৈতিক ও সামাজিক দিকগুলো কতটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তা নিয়ে বিতর্ক এবং আলোচনা প্রযুক্তি এবং সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অব্যাহত রয়েছে।