AI -নির্ভর আইভিএফ পদ্ধতিতে জন্ম নিল বিশ্বের প্রথম শিশু, বিজ্ঞানের যুগান্তকারী আবিষ্কার

ফার্টিলিটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, বিশ্বের প্রথম শিশু সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতিতে জন্ম নিয়েছে। এই ঘটনাকে প্রজনন বিজ্ঞানের জন্য এক বিশাল অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন গবেষকরা।
‘ইন্ট্রাসাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইনজেকশন’ বা আইসিএসআই নামে পরিচিত আইভিএফ-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম ব্যবহার করে এই শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানিয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক ওয়েবসাইট নোরিজ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং রোবোটিক্স ব্যবহার করে মানুষকে সন্তান জন্মদানে সহায়তার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন, আইসিএসআই হলো একটি সাধারণ আইভিএফ প্রক্রিয়া, যেখানে একজন উচ্চ প্রশিক্ষিত ভ্রূণ বিশেষজ্ঞ একটি বিশেষ সরঞ্জামের সাহায্যে একটি একক শুক্রাণুকে সাবধানে ডিম্বাণুর মধ্যে প্রবেশ করান। তবে, এবার গবেষকদের একটি আন্তর্জাতিক দল এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করেছে, যা কোনো চিকিৎসকের হাতের সাহায্য ছাড়াই আইসিএসআই প্রক্রিয়ার ২৩টি ধাপ সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম। এমনকি কিছু ধাপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
এই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে নিউ ইয়র্ক ও মেক্সিকোতে অবস্থিত ‘কনসিভেবল লাইফ সায়েন্সেস’-এর বিশেষজ্ঞদের একটি দল। এই দলে নেতৃত্ব দিয়েছেন ভ্রূণতত্ত্ববিদ ড. জ্যাক কোহেন, মেডিকেল অফিসার ড. আলেহান্দ্রো চ্যাবেস-বাদিওলা এবং প্রধান প্রকৌশলী অধ্যাপক জেরার্ডো মেন্ডিজাবাল রুইজ।
এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি মেক্সিকোর গুয়াদালাজারা শহরের ‘হোপ আইভিএফ মেক্সিকো’ নামক ফার্টিলিটি সেন্টারে নিবিড় পর্যবেক্ষণে পরিচালিত একটি গবেষণার অংশ হিসেবে সম্পন্ন হয়েছে। এআই-নির্ভর এই সিস্টেমটি সম্পূর্ণ আইসিএসআই পদ্ধতিতে নিজে নিজেই কাজ করতে সক্ষম, অথবা হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের ডিজিটাল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাজটি পরিচালনা করতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, শুক্রাণু নির্বাচন এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে তা স্থাপন করার জন্য গবেষকরা এআই ব্যবহার করেছেন। এমনকি শুক্রাণুর নড়াচড়া বন্ধ করার জন্য এআইয়ের মাধ্যমে লেজারও ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণত অত্যন্ত দক্ষ হাতের কাজ।
সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমে তৈরি ভ্রূণটি প্রথমে হিমায়িত করা হয় এবং পরবর্তীতে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। এর ফলস্বরূপ, একটি সুস্থ গর্ভাবস্থার পর একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছে।
বর্তমানে এই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়াটি ম্যানুয়াল পদ্ধতির তুলনায় কিছুটা বেশি সময় নিলেও, গবেষকরা আশাবাদী যে আরও উন্নয়নের সাথে সাথে এই পদ্ধতির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে। তাদের দাবি, এই সাফল্য প্রমাণ করে যে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় আইসিএসআই কেবল সম্ভবই নয়, বরং কার্যকরও, এবং এমনকি দূরবর্তী স্থান থেকেও এই পদ্ধতি পরিচালনা করা যেতে পারে। এই আবিষ্কার ফার্টিলিটি চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।