বিশেষ: সেমিকন্ডাকটর কী? কেন এতে শুল্ক নিয়ে অনড় রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

মোবাইল, কম্পিউটার ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো পণ্য চীন থেকে আমদানি করা হলেও, সেগুলোর ওপর উচ্চহারে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে না, এমন ঘোষণার একদিন পরই সুর বদলালেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ঘোষণা করেছেন, এই পণ্যগুলোকে অন্য একটি শুল্কনীতির আওতায় আনা হবে এবং সেমিকন্ডাক্টরকে লক্ষ্য করে মার্কিন আমদানির ওপর আরও ব্যাপক শুল্ক আরোপ করা হবে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোটি কোটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে শক্তিশালী করা ক্ষুদ্র চিপগুলো বর্তমানে বিশ্ব অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
সেমিকন্ডাক্টর কী এবং এর ব্যবহার:
সেমিকন্ডাক্টর, মাইক্রোচিপ বা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আইসি) – এই শব্দগুলো প্রায় একই পণ্যকে বোঝায়। এর মূল উপাদান হল সিলিকন। ডোপিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই চিপগুলোকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে প্রয়োজনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা যায় এবং প্রয়োজন না হলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখা যায়। এই বৈশিষ্ট্যটি সেমিকন্ডাক্টরকে ইলেকট্রনিক সুইচ হিসেবে ব্যবহার করতে সাহায্য করে, যা কম্পিউটারের বাইনারি কোড (০ এবং ১) বুঝতে পারে। এর ওপর ভিত্তি করেই কম্পিউটিংয়ের সার্কিট তৈরি হয়।
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইলেকট্রনিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, রিমোট গাড়ির চাবি, সেন্সরযুক্ত যানবাহন, রাউটার, সুইচ, ইন্টারনেট অবকাঠামো, বায়ু টারবাইন, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পেসমেকার এবং ইনসুলিন পাম্পের মতো বিভিন্ন ডিভাইসে এই চিপ ব্যবহৃত হয়।
চিপ উৎপাদনকারী দেশ:
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীন সেমিকন্ডাক্টরের জন্য প্রধানত তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি চিপ সরবরাহ করে তাইওয়ানের ‘তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি’ (টিএসএমসি)। মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া, আইফোন নির্মাতা অ্যাপল এবং সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টরা টিএসএমসির গ্রাহক। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে চলমান ‘চিপ যুদ্ধে’ টিএসএমসি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। টিএসএমসির পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিপ সরবরাহকারী দেশ হল দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের কারণ:
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রবর্তিত ‘পারস্পরিক’ শুল্কের মূল উদ্দেশ্য হল, কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করা। শুক্রবার, হোয়াইট হাউস স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং অন্যান্য কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল, যার মধ্যে চীনা আমদানির ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্কও ছিল। কিন্তু একদিনের মধ্যেই ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং ঘোষণা দেন যে, এই পণ্যগুলোকে অন্য একটি শুল্কনীতির আওতায় আনা হবে। এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প জানান, তিনি শীঘ্রই আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক হার ঘোষণা করবেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা চিপ, সেমিকন্ডাক্টরসহ অন্যান্য জিনিস আমাদের দেশেই তৈরি করতে চাই।”
অন্য দেশ থেকে মাইক্রোচিপ উৎপাদন বা আমদানি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে, এমন মন্তব্য করে ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের সদস্যরা জানিয়েছেন, আসন্ন তদন্তে তারা এই বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
রোববার, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ লেখেন, “আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্তে আমরা সেমিকন্ডাক্টর এবং পুরো ইলেকট্রনিক্স সরবরাহ চেইনের দিকে নজর দিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের মতো অন্য কোনো দেশের কাছে ‘জিম্মি’ থাকবে না।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে এবং দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।