Refurbished স্মার্টফোন: সস্তা নাকি ঠকার ফাঁদ? কেনার আগে জানুন জরুরি তথ্য

বর্তমান স্মার্টফোনের বাজারে ‘Refurbished’ ফোন নিয়ে অনেকের মনেই দ্বিধা ও বিভ্রান্তি কাজ করে। অনেকের ধারণা এই ধরনের ফোন মানেই পুরনো, নষ্ট বা সেকেন্ড হ্যান্ড। তবে সত্যিটা হলো, Refurbished স্মার্টফোন সবসময় খারাপ হয় না। বরং, কিছু ক্ষেত্রে এটি হতে পারে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো ফোন পাওয়ার সুযোগ।
তাহলে, Refurbished স্মার্টফোন আসলে কী? কেন এই ফোনগুলো নতুন ফোনের তুলনায় সস্তা হয়? এবং কেনার আগে किन किन বিষয় মাথায় রাখা জরুরি? আসুন, বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
Refurbished স্মার্টফোন কী?
সহজ ভাষায়, Refurbished স্মার্টফোন হলো সেই ডিভাইস যা কোনো গ্রাহক কেনার পর ত্রুটি, অপছন্দ বা অন্য কোনো কারণে ফেরত দিয়েছেন। কোম্পানি সেই ফোনটিকে বিশেষভাবে মেরামত করে, ত্রুটিমুক্ত করে এবং পুনরায় বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে তোলে।
অন্যদিকে, সেকেন্ড হ্যান্ড ফোন সরাসরি একজন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে কেনা হয়, যেখানে কোনো প্রকার গ্যারান্টি বা সার্টিফায়েড চেকিংয়ের সুযোগ থাকে না।
কিন্তু Refurbished ফোনের ক্ষেত্রে, পেশাদার টেকনিশিয়ান দ্বারা ফোনটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা ও মেরামত করা হয়। প্রয়োজনে নতুন যন্ত্রাংশ (Original Equipment Manufacturer – OEM) লাগানো হয় এবং ফোনটিকে প্রায় নতুনের মতোই কার্যক্ষম করে তোলা হয়।
Refurbished ফোন তৈরির প্রক্রিয়া: পুরনো ফোন কীভাবে নতুনের মতো হয়ে ওঠে?
- সংগ্রহ (Assemble): গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া পুরনো বা ত্রুটিপূর্ণ ফোনগুলো কোম্পানি সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ভাঙা ডিসপ্লে, জলে পড়া ফোন বা হার্ডওয়্যার সমস্যাযুক্ত ডিভাইসও থাকতে পারে।
- পরীক্ষা-নিরীক্ষা (Testing): ফোনটি মেরামতের যোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি ডিভাইস গভীরভাবে পরীক্ষা করা হয়। টেকনিশিয়ানরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করেন এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের তালিকা তৈরি করেন।
- মেরামত (Repair): ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রাংশ সরিয়ে নতুন OEM পার্টস যেমন স্ক্রিন, ব্যাটারি, ক্যামেরা, চিপসেট ইত্যাদি প্রতিস্থাপন করা হয়।
- পরিষ্কার ও পরীক্ষা (Cleaning and Testing): ফোনের ভেতর ও বাইরের অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এরপর একাধিকবার পরীক্ষা করা হয়, যাতে কোনো ত্রুটি অবশিষ্ট না থাকে।
- গ্রেডিং (Grading): মেরামতের পর ফোনের বাহ্যিক ও কার্যকারিতার অবস্থার উপর ভিত্তি করে গ্রেড দেওয়া হয়:
- Grade A: দেখতে ও পারফর্মেন্সে প্রায় নতুনের মতো।
- Grade B: সামান্য কসমেটিক দাগ থাকতে পারে, কিন্তু কার্যকারিতা নতুনের মতোই।
- Grade C: দৃশ্যমান দাগ থাকতে পারে, তবে মূল ফিচারগুলো চালু থাকে।
- প্যাকেজিং ও বিক্রয় (Packaging & Sales): ফোনটিকে নতুন মোড়কে প্যাক করা হয়। সাথে চার্জার ও প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসরিজ দেওয়া হয় এবং মূল ফোনের তুলনায় কম দামে বিক্রি করা হয়।
Refurbished স্মার্টফোন কেনার আগে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি:
- বিশ্বস্ত বিক্রেতা বা ব্র্যান্ড থেকে কিনুন: খ্যাতিসম্পন্ন সেলার বা সরাসরি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে কিনলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
- গ্যারান্টি ও রিটার্ন পলিসি ভালোভাবে যাচাই করুন: কেনার আগে ওয়ারেন্টি এবং রিটার্ন পলিসি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
- গ্রেড (Grade) দেখে কিনুন: সম্ভব হলে Grade A বা Grade B ফোন কেনার চেষ্টা করুন।
- শারীরিক অবস্থা নিজে যাচাই করুন: ফোন হাতে পেলে ভালোভাবে দেখে নিন, কোনো দৃশ্যমান ত্রুটি আছে কিনা।
- অনলাইনে বিক্রেতার রিভিউ পড়ুন: অন্যান্য গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
Refurbished স্মার্টফোনে কি ত্রুটি থাকতে পারে?
যদি আপনি কোনো অবিশ্বস্ত বিক্রেতার কাছ থেকে Refurbished ফোন কেনেন, তাহলে ত্রুটিপূর্ণ ডিভাইস পাওয়ার ঝুঁকি অবশ্যই থাকে। তবে, সুনামধন্য কোম্পানি ও সার্টিফায়েড বিক্রেতারা সাধারণত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গ্যারান্টি প্রদান করে।
Refurbished ফোন কিনবেন? এই বিষয়গুলো না জানলে ঠকতে পারেন!
বর্তমানে অনেকেই সাশ্রয় করার জন্য Refurbished ফোন কেনার দিকে ঝুঁকছেন। তবে কেনার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করুন:
- গ্যারান্টি অবশ্যই চেক করুন: কত দিনের গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে এবং তা কী কী কভার করছে, তা জেনে নিন।
- কোম্পানির সার্টিফিকেশন যাচাই করুন: বিক্রেতার কাছে Refurbished ফোন বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেশন আছে কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
- রিটার্ন ও রিপ্লেসমেন্ট পলিসি ভালোভাবে পড়ুন: কেনার পর ফোনটিতে কোনো সমস্যা দেখা দিলে ফেরত বা পরিবর্তনের সুযোগ আছে কিনা, তা জেনে নেওয়া জরুরি।
সঠিক জ্ঞান ও সতর্কতা অবলম্বন করে Refurbished স্মার্টফোন কিনলে আপনি কম দামে একটি ভালো মানের ফোন পেতে পারেন। তবে তাড়াহুড়ো করে বা যাচাই না করে কিনলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।