কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ইন্টারনেটের সঙ্গে জুড়ে দেবে এই ডিভাইস, চিপ তৈরি বিজ্ঞানীদের

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের জগতে এক বড় অগ্রগতি এনেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা এমন একটি ক্ষুদ্র চিপ তৈরি করেছেন যা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ভিত্তি কিউবিট থেকে আসা মাইক্রোওয়েভ ফোটনকে প্রচলিত ডেটা স্থানান্তর পদ্ধতিতে ব্যবহৃত অপটিক্যাল ফোটনে রূপান্তর করতে সক্ষম। গবেষকদের দাবি, এই উদ্ভাবন বিভিন্ন কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে দীর্ঘ দূরত্বে যোগাযোগের পথ খুলে দেবে, যা ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম ইন্টারনেট বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার পরিচালনার জন্য অপরিহার্য মাইক্রোওয়েভ কিউবিট তৈরি করা তুলনামূলকভাবে সহজ এবং নিয়ন্ত্রণ করাও সুবিধাজনক। তবে, এই কিউবিটগুলো কেবল পরম শূন্যের কাছাকাছি অতি শীতল তাপমাত্রায় কাজ করতে পারে। সামান্য উষ্ণতাও কোয়ান্টাম তথ্যের দ্রুত ধ্বংসের কারণ হতে পারে। এর ফলে, মাইক্রোওয়েভ কিউবিট ব্যবহার করে দীর্ঘ দূরত্বে ডেটা স্থানান্তর করা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ উষ্ণ পরিবেশে তথ্য হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অন্যদিকে, ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট কেবলে ব্যবহৃত অপটিক্যাল ফোটন সাধারণ তাপমাত্রায় অনেক দূর পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা মাইক্রোওয়েভ ফোটনকে অপটিক্যাল ফোটনে রূপান্তরের একটি কার্যকর উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলেন।
অবশেষে, ‘ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (ক্যালটেক)-এর অধ্যাপক মোহাম্মদ মিরহোসেইনির নেতৃত্বে একদল গবেষক নতুন এক ‘অন চিপ’ ডিভাইস তৈরি করেছেন। তাদের দাবি, এই ক্ষুদ্র সিলিকন ডিভাইসটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ ফোটনকে অপটিক্যাল ফোটনে রূপান্তরিত করতে সক্ষম। এই গবেষণাটি সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার ন্যানোটেকনোলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে।
ডিভাইসটির কার্যপদ্ধতি:
গবেষকরা জানিয়েছেন, ডিভাইসটিতে একটি অতি ক্ষুদ্র সিলিকন রশ্মি রয়েছে যা পাঁচ গিগাহার্টজ গতিতে কম্পন তৈরি করে। এই রশ্মি একটি মাইক্রোওয়েভ রেজোনেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যেখানে মাইক্রোওয়েভ ফোটনগুলো আবদ্ধ থাকে। যখন একটি মাইক্রোওয়েভ ফোটন রেজোনেটরে প্রবেশ করে, তখন সেটি রশ্মিটিকে কাঁপিয়ে তোলে। এরপর লেজারের সাহায্যে সেই কম্পনকে অপটিক্যাল ফোটনে রূপান্তরিত করা হয়।
ক্যালটেকের স্নাতক শিক্ষার্থী ও এই গবেষণার সহ-প্রধান লেখক উইলিয়াম চেন বলেন, মাইক্রোওয়েভ ও অপটিক্যাল ফোটনের সরাসরি সংযোগ স্থাপন কঠিন হলেও, একটি যান্ত্রিক পদক্ষেপের মাধ্যমে কাজটি সহজ হয়েছে। এই কম্পনশীল রশ্মিটি দুটি ভিন্ন ধরনের ফোটনের মধ্যে সেতুর মতো কাজ করে।
এই ধরনের কাজের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নয়েজ বা অযাচিত সংকেতের পরিমাণ কম রাখা, যা মূল সংকেতের কাজে বাধা দিতে পারে। গবেষকরা সিলিকন ব্যবহার করে এই ডিভাইসটি তৈরি করেছেন, যা লেজারে খুব বেশি গরম হয় না এবং নয়েজের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করে।
গবেষকদের দাবি, এই ডিভাইসটি মাইক্রোওয়েভ ফোটনকে অপটিক্যাল ফোটনে রূপান্তরের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় একশ গুণ বেশি কার্যকর এবং এটিকে বড় পরিসরে তৈরি করাও তুলনামূলকভাবে সহজ। এই উদ্ভাবন ভবিষ্যতের কোয়ান্টাম যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং বিস্তৃত করতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।