“২০ বছরের মধ্যে ‘খুবই কার্যকর’ হবে”- কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ল্যাব খুলছে এনভিডিয়া,

মার্কিন চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ল্যাব খোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বৃহস্পতিবার কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং জানিয়েছেন, এই ল্যাব প্রতিষ্ঠায় ‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি’ এবং ‘ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ (এমআইটি)-এর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে এনভিডিয়া।

ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসেতে এনভিডিয়ার বার্ষিক সফটওয়্যার ডেভেলপার সম্মেলনে (জিটিসি) এই ঘোষণা দেন হুয়াং। এই সম্মেলনে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংকে কেন্দ্র করে একটি পূর্ণ দিনের ইভেন্টও আয়োজন করা হয়েছিল। নতুন এই ল্যাবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এনভিডিয়া অ্যাক্সিলারেটেড কোয়ান্টাম রিসার্চ সেন্টার’ (এনভিএকিউসি), যা চলতি বছরের শেষের দিকে কার্যক্রম শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সম্ভাবনা

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এমন এক প্রযুক্তি, যা বর্তমান প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় লাখ লাখ গুণ দ্রুত হিসাব করতে সক্ষম। এটি চিকিৎসা, রসায়ন, জ্বালানি এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে বিপ্লব ঘটাতে পারে। হুয়াং বলেন, “কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এআই সুপারকম্পিউটারের সঙ্গে মিলে ওষুধ আবিষ্কার থেকে শুরু করে উন্নত উপকরণ তৈরি পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো সমাধান করবে।” নতুন ওষুধের গবেষণা, আরও কার্যকর ব্যাটারি ডিজাইন এবং জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধানে এই প্রযুক্তি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা

সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং গবেষণায় কয়েকশ কোটি ডলার বিনিয়োগ করছে। এ তালিকায় এগিয়ে রয়েছে মাইক্রোসফট, যারা এ বছরের শুরুতে ‘মাজোরানা ১’ নামে একটি নতুন চিপ উন্মোচন করেছে। এই চিপ কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে ত্রুটি সংশোধন ও স্থায়িত্ব বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করেছে কোম্পানিটি। এবার এনভিডিয়াও এই দৌড়ে যোগ দিয়েছে। হুয়াং এর আগে জানুয়ারিতে বলেছিলেন, “খুবই কার্যকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার আসতে ২০ বছর লাগবে।” তবে বৃহস্পতিবার তিনি হাস্যরসের সঙ্গে বলেন, “এটাই প্রথম ইভেন্ট, যেখানে একজন সিইও সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আমার ভুল বোঝাতে।”

সহযোগিতা ও উদ্দেশ্য

বস্টনের এই নতুন ল্যাবে হার্ভার্ড ও এমআইটির বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে অগ্রগামী কোম্পানি যেমন—কোয়ান্টিনিয়াম, কোয়ান্টাম মেশিনস এবং কুয়েরা কম্পিউটিং—এর সঙ্গে কাজ করবে এনভিডিয়া। ল্যাবটি কোয়ান্টাম হার্ডওয়্যারকে এআই সুপারকম্পিউটারের সঙ্গে একীভূত করে ‘অ্যাক্সিলারেটেড কোয়ান্টাম সুপারকম্পিউটিং’ নামে একটি নতুন প্রযুক্তি গড়ে তুলবে। এটি কোয়ান্টাম ত্রুটি সংশোধন, হাইব্রিড অ্যালগরিদম উন্নয়ন এবং ব্যবহারিক কোয়ান্টাম ডিভাইস তৈরির মতো চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে।

বাজারে এনভিডিয়ার অবস্থান

এনভিডিয়া জানিয়েছে, গত বছর বিভিন্ন ডেটা সেন্টারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য চিপের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে তারা ১৩ কোটি ৫ লাখ ডলার আয় করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটি ৪৩০০ কোটি ডলার আয়ের পূর্বাভাস দিয়েছে, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে গেছে। এআই এবং গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটে (জিপিইউ) আধিপত্যের পাশাপাশি এনভিডিয়া এখন কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে প্রবেশ করে নিজেদের প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব আরও শক্তিশালী করতে চায়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তীব্র প্রতিযোগিতায় রয়েছে। চীন গত ডিসেম্বরে ‘তিয়ানইয়ান-৫০৪’ নামে ৫০০ কিউবিটের একটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার উন্মোচন করেছে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটন এই প্রযুক্তির ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে, যাতে এর সুবিধা প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর হাতে না পড়ে। এনভিডিয়ার এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের কোয়ান্টাম গবেষণাকে আরও ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বস্টনের এই ল্যাব কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গড়তে কতটা ভূমিকা রাখবে, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে এটি স্পষ্ট যে, এনভিডিয়া প্রযুক্তির নতুন সীমানা ছুঁতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।