বিশ্ববাজারের এক-তৃতীয়াংশ দখল করবে জেনএআই স্মার্টফোন, হবে নতুন যুগের সূচনা

চলতি বছর বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের এক-তৃতীয়াংশে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (জেনএআই) প্রযুক্তি থাকবে বলে জানিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ। তাদের ‘এআই ৩৬০ সার্ভিস’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৪০ কোটির বেশি জেনএআই-সক্ষম স্মার্টফোন বাজারে আসবে। এই প্রযুক্তি স্মার্টফোন শিল্পে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বব্যাপী প্রতি পাঁচটি স্মার্টফোনের একটিতে জেনএআই প্রযুক্তি ছিল। চিপসেট প্রযুক্তির উন্নতি এবং আরও দক্ষ লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (এলএলএম) তৈরির ফলে জেনএআইয়ের ব্যবহার প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে প্রিমিয়াম স্মার্টফোনগুলোতে এই প্রযুক্তি একটি মানসম্মত ফিচারে পরিণত হয়েছে। কাউন্টারপয়েন্টের পূর্বাভাস, ২০২৫ সাল থেকে মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোনেও জেনএআই দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।
স্মার্টফোনে জেনএআইয়ের প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, জেনএআই প্রযুক্তি স্মার্টফোন শিল্পে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। এটি ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করছে এবং এআই-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ও পরিষেবার ব্যবহার বাড়াচ্ছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষক রাহুল শর্মা বলেন, “জেনএআই মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোনে প্রসারিত হলে ডিজিটাল প্রযুক্তি আরও গণমুখী হবে। এটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্নত প্রযুক্তির দরজা খুলে দেবে।”
গত বছর স্মার্টফোন নির্মাতারা জেনএআইকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রচার করে বিক্রি বাড়িয়েছে। চলতি বছর এই প্রবণতা আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তবে তারা সতর্ক করে বলছেন, জেনএআই এখনো ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়নি। অনেকের কাছে এটি দৈনন্দিন কাজে তেমন উপকারী মনে হচ্ছে না। ফলে নির্মাতারা এমন জেনএআই ফিচার খুঁজছেন, যা ব্যবহারকারীদের ফোন আপগ্রেডে উৎসাহিত করবে।
অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের আধিপত্য
কাউন্টারপয়েন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনএআই স্মার্টফোন বাজারে প্রাথমিকভাবে শীর্ষে থাকবে অ্যাপল ও স্যামসাং। এই দুই টেক জায়ান্ট প্রিমিয়াম সেগমেন্টে প্রতিযোগিতা করবে। অ্যাপল তার ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ এবং স্যামসাং ‘গ্যালাক্সি এআই’ প্রযুক্তিতে বড় বিনিয়োগ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৬ সালের শেষ বা ২০২৭ সালের শুরুতে জেনএআই আরও সাশ্রয়ী হবে এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছবে। চীনা ব্র্যান্ড যেমন ভিভো, অপো, শাওমি ও অনর মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোনে জেনএআই সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাজারে প্রভাব ও ভবিষ্যৎ
জেনএআই-সক্ষম সাশ্রয়ী স্মার্টফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে স্মার্টফোনের মোট বিক্রিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ডাটা বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ডিমান্ডসেইজের মতে, ২০২৫ সালে শুধু স্মার্টফোন নয়, বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি শিল্পে জেনএআইয়ের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বাড়বে। গত বছর এই বাজারে শীর্ষে ছিল ওপেনএআই, মিডজার্নি, লাইট্রিকস ও হাগিং ফেইসের মতো প্রতিষ্ঠান, যারা চ্যাটজিপিটি, বার্ড ও জ্যাসপারএআইয়ের মতো প্রযুক্তি তৈরি করেছে।
পরবর্তী ধাপ: এজেন্টিক এআই
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জেনএআইয়ের পর স্মার্টফোন শিল্পে পরবর্তী বড় উদ্ভাবন হবে ‘এজেন্টিক এআই’। এটি প্রিমিয়াম স্মার্টফোনে নতুন বৈশিষ্ট্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং জেনএআই অ্যাসিস্টেন্টকে ছাড়িয়ে যাবে। এজেন্টিক এআই আরও স্বতন্ত্র, পরিস্থিতি-সচেতন এবং কার্যকরী অভিজ্ঞতা দেবে। প্রযুক্তি বিশ্লেষক সুধীর মেহতা বলেন, “এজেন্টিক এআই স্মার্টফোনকে আরও স্মার্ট করে তুলবে, যা ব্যবহারকারীদের দৈনন্দিন কাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।”
জেনএআইয়ের উন্নতি
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জেনএআই প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। এটি এখন শুধু ডাটা বিশ্লেষণ নয়, মানুষের মতো লেখা, ছবি তৈরি, কথা বলা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও রাখে।