WhatsApp: ভারতে বন্ধ হয়ে গেলো ৯৯ লাখ অ্যাকাউন্ট, যেভাবে সুরক্ষিত রাখবেন আপনারটি

সাইবার অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকি, বিশেষ করে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’-এর মতো নতুন প্রতারণার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ। সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ভারতে প্রায় ৯৯ লক্ষ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য প্ল্যাটফর্মটিকে নিরাপদ রাখা এবং সাধারণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করা।

হোয়াটসঅ্যাপের মাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে মোট ৯৯ লক্ষ ৬৭ হাজার অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ লক্ষ ২৭ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে কোনও ব্যবহারকারীর অভিযোগ ছাড়াই। সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের স্বয়ংক্রিয় সনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রতারণামূলক আচরণ ধরা পড়েছে। এই ব্যবস্থা ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৪(১)(ডি) এবং ৩এ(৭) ধারা মেনে পরিচালিত হয়েছে।

কেন বন্ধ হচ্ছে অ্যাকাউন্ট?

হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু কারণে অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • স্প্যামিং: একসঙ্গে প্রচুর মেসেজ পাঠানো বা একাধিক ব্যক্তিকে একই বার্তা পাঠানো।
  • ভুয়ো তথ্য প্রচার: বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা তথ্য বারবার ফরোয়ার্ড করা।
  • অবৈধ কার্যকলাপ: ভারতীয় আইনের অধীনে অবৈধ কার্যে জড়িত থাকা।
  • অসম্মানজনক আচরণ: অন্য ব্যবহারকারীদের প্রতি অপমানজনক বা হয়রানিমূলক ব্যবহার।

সংস্থাটি জানিয়েছে, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ভিত্তিক প্রযুক্তি এই ধরনের আচরণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করে এবং ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া, ব্যবহারকারীদের রিপোর্টের ভিত্তিতেও অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হচ্ছে।

সাইবার অপরাধের নতুন হুমকি

সাম্প্রতিক সময়ে ‘ডিজিটাল অ্যারেস্ট’ নামে একটি নতুন প্রতারণা ভারতে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই কৌশলে প্রতারকরা ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ কলের মাধ্যমে নিজেদের পুলিশ বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখায় এবং টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ধরনের অপরাধ রুখতে হোয়াটসঅ্যাপের এই পদক্ষেপকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার উপায়

হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে:

  • অযথা বা সন্দেহজনক মেসেজ ফরোয়ার্ড করা থেকে বিরত থাকুন।
  • অন্য ব্যবহারকারীদের হয়রানি বা অপমান করবেন না।
  • অবৈধ কার্যকলাপে জড়াবেন না।
  • বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া কোনো তথ্য শেয়ার করবেন না।

হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। প্রতারণা ও অপব্যবহার রোধে আমরা ক্রমাগত প্রযুক্তি উন্নত করছি।”

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা হোয়াটসঅ্যাপের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “এই পদক্ষেপ সাইবার অপরাধীদের জন্য একটি শক্ত বার্তা। তবে ব্যবহারকারীদেরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।” তবে কিছু ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, তাদের অ্যাকাউন্ট ভুলবশত বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, ব্লক হওয়া অ্যাকাউন্টের মালিকরা আপিল করতে পারবেন।

হোয়াটসঅ্যাপের এই কঠোর পদক্ষেপ ভারতে ডিজিটাল নিরাপত্তা জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদেরও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তাদের অ্যাকাউন্ট অপ্রত্যাশিতভাবে বন্ধ না হয়ে যায়।