প্রায় এক হাজার চারশ মোবাইল ডিভাইসে সাইবার হামলা চালানোর ঘটনায় মেটা মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপের আনা মামলায় সম্প্রতি পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা এনএসও গ্রুপ’কে দায়ী করেছে মার্কিন আদালত।
এ বিষয়টিকে শুক্রবার গভীর রাতে পেগাসাস স্পাইওয়্যার নির্মাতা এনএসও গ্রুপ-এর বিরুদ্ধে এক আইনি জয় হিসেবে দাবি করেছে মেটার মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ।
নজরদারী প্রযুক্তি তৈরি করা ইসরায়েলী কোম্পানি ‘এনএসও গ্রুপ টেকনোলজিস’-এর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের মে মাসে এ মামলা করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এতে কুখ্যাত পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার দুই সপ্তাহের মধ্যে এক হাজার চারশ জনের ফোনে সাইবার হামলা চালায় ও ডিভাইসে নজরদারি করার অভিযোগ করে হোয়াটসঅ্যাপ।
শুক্রবার বিচারক ফিলিস হ্যামিলটন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল মার্কিন হ্যাকিং আইনের পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপের নিজস্ব পরিষেবার শর্তাবলীও লঙ্ঘন করেছে কোম্পানিটি।
এজন্য বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং পরিষেবা হোয়াটসঅ্যাপকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে কতো অর্থ দেবে তা নির্ধারণ করতে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে এক আলাদা জুরি বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এনএসও গ্রুপকে।
কোম্পানির বিরুদ্ধে এখন ‘শুধু ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়েই বিচার এগিয়ে যাবে’ বলে প্রতিবেদনে লিখেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট ভার্জ।
হোয়াটসঅ্যাপ এক বিবৃতিতে বলেছে, “পাঁচ বছর ধরে মামলা চলার পর আজকের এই সিদ্ধান্তের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। হোয়াটসঅ্যাপ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও নাগরিক সমাজের উপর কোম্পানিটির বেআইনি সাইবার হামলার জন্য আর দায় এড়াতে পারবে না এনএসও। এই রায়ের মাধ্যমে বিভিন্ন স্পাইওয়্যার কোম্পানিকেও সতর্ক হতে হবে, কারণ তাদের বেআইনি কর্মকাণ্ড আর সহ্য করা হবে না।”
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের অনুরোধে সাড়া দেয়নি এনএসও গ্রুপ।
মামলার সংক্ষিপ্ত রায়ে বিচারক বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার জালিয়াতি ও অপব্যবহার আইন লঙ্ঘন করেছে এনএসও গ্রুপ। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা করলেও সেপ্টেম্বরে তা প্রত্যাহার করে নেয় টেক জায়ান্ট অ্যাপল।
রায়ে বিচারক বলেছেন, মামলা চলাকালীন এর রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে এনএসও গ্রুপ। ২০২৪ সালের গোড়ার দিকে হোয়াটসঅ্যাপকে তাদের স্পাইওয়্যারের সোর্স কোড দিতে এনএসও গ্রুপকে নির্দেশ দিয়েছিল বিচারক হ্যামিলটন। তবে বারবার তা এড়িয়ে গিয়েছে কোম্পানিটি। কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পেছনে ওই ব্যর্থতা বড় কারণ হিসাবে কাজ করেছে।
এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে কম্পিউটার জালিয়াতি ও অপব্যবহার আইন লঙ্ঘন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া কম্প্রিহেনসিভ কম্পিউটার ডেটা অ্যাকসেস অ্যান্ড ফ্রড অ্যাক্ট’-এর লঙ্ঘন ও চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে হোয়াটসঅ্যাপ।
এদিকে কোম্পানিটি বলেছে, এর পেছনে তারা কোনোভাবেই দায়ী নয়। কারণ অপরাধ ও জাতীয় সুরক্ষার বিভিন্ন মামলার তদন্তকারী ক্লায়েন্টদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে পেগাসাস। তবে কেম্পানিটির এসব যুক্তি খারিজ করে দিয়েছেন বিচারক, যা এই ধরনের ব্যবসায়ের অন্যান্য কোম্পানির জন্য নজির তৈরি করতে পারে।
হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও কূটনীতিকরা।
২০২১ সালে এনএসও গ্রুপকে কালো তালিকাভুক্ত করে জো বাইডেনের প্রশাসন। বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদী বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে হ্যাকিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে পেগাসারের বিরুদ্ধে।