“মদ্যপানের পর শারীরিক ঘনিষ্টতা…?”-যৌন হয়রানির অভিযোগ, স্পেসএক্সের বিরুদ্ধে মামলা

বৈষম্য, যৌন হয়রানি এবং প্রতিশোধপরায়ণতার অভিযোগে এবার স্পেসএক্স এবং এর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন কোম্পানিটির এক সাবেক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক। এই মামলায় আবারও স্পেসএক্সের কর্মপরিবেশ এবং নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।

২০২২ সালে স্পেসএক্সে নিয়োগ পাওয়ার পর জেনা শামওয়ে সিনিয়র কনট্র্যাক্টর প্রোগ্রাম সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। শামওয়ে অভিযোগ করেছেন, কোম্পানির জ্যেষ্ঠ কর্মী ড্যানিয়েল কলিন্স অসংখ্য নীতিমালার লঙ্ঘন করেছেন এবং পরবর্তীতে এই তথ্য সরকারের কাছে গোপন করেছেন। কলিন্সকে কোম্পানির সরকারি প্রকল্পে সিকিউরিটি কমপ্লায়েন্স পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে যে, স্পেসএক্স নিরাপত্তা প্রোটোকলে ত্রুটির জন্য ফেডারেল পর্যালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, কলিন্স ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স’ লঙ্ঘন বিষয়ে কোম্পানিতে রিপোর্ট করাকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন এবং যথাযথ ছাড়পত্র নেই এমন ব্যক্তিদের নির্বাহীদের গোপন মিটিংয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ এবং আরও কিছু বিষয়ে কোম্পানিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অন্তত তিনটি ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়।

শামওয়ের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি যে পরিচালক পদে আগ্রহী ছিলেন, সেই পদে তাকে আবেদন করার সুযোগই দেওয়া হয়নি। বরং ওই পদে নিয়োগ পান কলিন্স। ২০২৪ সালের বসন্তে কলিন্স ওই ঊর্ধ্বতন পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই শামওয়ের কর্মপরিবেশ বদলে যেতে শুরু করে। শামওয়ের দাবি, কলিন্স তার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক আচরণ শুরু করেন, যার মধ্যে ছিল তার কাজের আওতা ক্রমশ কমিয়ে আনা। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের অক্টোবরে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

অন্যান্য নারী কর্মীদের প্রতি হয়রানির অভিযোগ:

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে যে, কলিন্স শুধু শামওয়ে নন, অন্যান্য নারী কর্মীদের ওপরও হয়রানি চালিয়ে গেছেন। তার এ ধরনের কাজের মধ্যে ছিল নারী কর্মীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা, যাতে তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়ম ভঙ্গের ফাঁদে ফেলা যায়। এছাড়াও, মিটিং চলাকালীন তাদের বুকের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং অধস্তন এক নারী কর্মীকে ‘মদ্যপানের পর শারীরিক ঘনিষ্ঠতার’ প্রস্তাব দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে।

শামওয়েসহ অন্যান্য নারী কর্মীরা কলিন্সের বিষয়ে স্পেসএক্সের মানবসম্পদ বিভাগে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করেছিলেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে যে, কোম্পানি ওই অভিযোগগুলো এড়িয়ে গিয়েছে এবং তাদের কলিন্সের সঙ্গে একা না থাকার পরামর্শ দেওয়া ছাড়া কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।

স্পেসএক্সের পুরোনো অভিযোগ:

প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, লিঙ্গ বৈষম্যের অভিযোগে এই প্রথম যে স্পেসএক্সের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এমন নয়। এর আগের মামলাগুলোতেও কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নারী কর্মীদের সঙ্গে পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং নেতিবাচক কর্মপরিবেশের অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে স্পেসএক্স একই ধরনের অভিযোগে ক্যালিফোর্নিয়ার সিভিল রাইটস ডিপার্টমেন্ট এবং ন্যাশনাল লেবার রিলেশনস বোর্ডের সঙ্গেও আইনি লড়াই করছে।

এই মামলা প্রসঙ্গে শামওয়ে, কলিন্স এবং স্পেসএক্সের আইনজীবীরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই নতুন মামলাটি স্পেসএক্সের অভ্যন্তরীণ কর্মপরিবেশ নিয়ে আবারও বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy