“মদের গন্ধ পেলেই থেমে যাবে গাড়ির ইঞ্জিন”-অভিনব ডিভাইস তৈরি বাংলার দুই পড়ুয়ার

“বাবার মাথা ভীষণ দামি, হেলমেটেতে ঢাকা। ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা!” – এই স্লোগান একসময় পথ নিরাপত্তার বার্তা দিয়েছিল। এবার সেই ‘ছোট্ট মাথাই’ পথ সুরক্ষায় নিয়ে এল এক যুগান্তকারী সমাধান। মেদিনীপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাভবনের দশম শ্রেণির দুই পড়ুয়া, অন্তরীপ দে ও সৌহার্দ্য দে, তৈরি করেছে এক অভিনব ‘অ্যালকোহল ডিটেক্টর ডিভাইস’, যা অ্যালকোহলের গন্ধ পেলেই গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দেবে।

বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিউবেশন সেন্টারে আয়োজিত ‘টেক ফেস্ট ২০২৫’-এ এই ডিভাইসটি প্রদর্শিত হয় এবং সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।

কীভাবে কাজ করবে এই যন্ত্র?

অন্তরীপ ও সৌহার্দ্য জানিয়েছে, ডিভাইসটি গাড়ির চালকের মাথার ঠিক উপরে বসানো থাকবে। চালকের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে অ্যালকোহলের উপস্থিতি নির্ণয় করে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দেবে। একই সাথে, লাল আলো জ্বলে উঠবে এবং বিপ বিপ শব্দে আশপাশের মানুষকে সতর্ক করবে। চালক সম্পূর্ণ ‘সুস্থ’ না হওয়া পর্যন্ত গাড়ির ইঞ্জিন পুনরায় চালু হবে না। ট্রাক বা বাসের ক্ষেত্রে চালককে একটি বিশেষ সেন্সর-যুক্ত মাস্ক পরে বসতে হবে, যার মাধ্যমে ডিভাইসটি কাজ করবে।

‘টেক ফেস্ট ২০২৫’-এর ভাবনা:

‘টেক ফেস্ট ২০২৫’ ছিল ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবনা এবং বৈজ্ঞানিক মডেল প্রদর্শনের এক বিশাল মঞ্চ। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার কর এই উৎসবের উদ্বোধন করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের ৩২টি দল এই ফেস্টে অংশ নেয়। উপাচার্য দীপককুমার কর এবং অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা পড়ুয়াদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর মডেল এবং চিন্তাভাবনা দেখে মুগ্ধ হন। উপাচার্য বলেন, “ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা যে সব অভিনব প্রযুক্তির কথা ভাবছে এবং সে সবের মডেল তৈরি করছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

পথ সুরক্ষায় নতুন দিশা
বর্তমানে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোই পথ দুর্ঘটনার অন্যতম বড় কারণ। পুলিশ এখন ‘ব্রিদ অ্যানালাইজ়ার’ ব্যবহার করে মত্ত চালকদের শনাক্ত করে। কিন্তু সেই পরীক্ষার আগেই অনেক সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে। অন্তরীপ ও সৌহার্দ্যের দাবি, যদি পরিবহণ দপ্তর তাদের তৈরি এই ডিভাইসটিকে গাড়িতে রাখা বাধ্যতামূলক করে, তাহলে দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি অনেকটাই কমে যাবে।

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনকিউবেশন সেন্টারের কোঅর্ডিনেটর অধ্যাপক ব্রজগোাপাল বাগ বলেন, “বিজ্ঞানের বিকাশ ছাড়া মেধা ও সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই এই আয়োজন।” পশ্চিম মেদিনীপুরের আরটিও সন্দীপ সাহাও এই উদ্যোগে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের তৈরি ওই ডিভাইস দেখতে হবে। তারপরে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে পরিবহণ দপ্তরকেও জানাব।”

এই ছোট উদ্যোগটি যদি সত্যি সত্যি বাস্তব রূপ পায়, তাহলে তা পথ সুরক্ষায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy