স্মার্টওয়াচ মানেই কি শুধু সময় দেখা? এই ধারণা এখন অতীত। স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা থেকে শুরু করে ঘুমের ধরন, প্রতিদিনের জলপান, হাঁটার পরিমাণ, এমনকি হৃদযন্ত্রের গতিবিধি – সবকিছুই জানান দেয় হাতের স্মার্টওয়াচ। আবহাওয়ার পূর্বাভাসও এখন স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে হাতের মুঠোয়। আর এবার, এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে গুগল। তাদের স্মার্টওয়াচে যুক্ত হচ্ছে যুগান্তকারী ‘আর্থকোয়াক ডিটেকশন’ ফিচার, যা আপনাকে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা পৌঁছে দেবে!
গুগলের পরীক্ষিত প্রযুক্তি, এবার কব্জিবন্ধনীতে
স্মার্টওয়াচে এই ফিচার নতুন হলেও গুগলের জন্য এটি নতুন নয়। ২০২০ সালে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য এই ফিচারটি চালু করেছিল গুগল, যা ভূমিকম্পের হদিশ দিতে বেশ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। এবার সেই প্রমাণিত প্রযুক্তিই খুব শিগগিরই স্মার্টওয়াচে উপলব্ধ হতে চলেছে।
কীভাবে কাজ করবে এই ‘আর্থকোয়াক ডিটেকশন সিস্টেম’?
এই সিস্টেমটি সিসমোমিটারের উপর সরাসরি নির্ভর না করে, গুগলের নিজস্ব মোশন সেন্সর প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে। যখন একইসঙ্গে বহু অ্যান্ড্রয়েড ফোন মাটির কম্পন অনুভব করে, তখন গুগলের সার্ভার দ্রুত সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয় যে ভূমিকম্প হচ্ছে কি না। যদি ভূমিকম্পের কোনো আশঙ্কা থাকে, তবে সিস্টেমটি দ্রুত কাছাকাছি থাকা ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়। এই সতর্কবার্তায় পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, ব্যবহারকারী কম্পনের উৎস থেকে কতটা দূরে রয়েছেন।
এই একই প্রযুক্তি এবার স্মার্টফোন থেকে স্মার্টওয়াচে নিয়ে আসা হচ্ছে। কোনো এলাকার মাটি কাঁপতে শুরু করলেই দ্রুত সংকেত পৌঁছে যাবে আপনার হাতের যন্ত্রে। অর্থাৎ, যদি আপনার ফোন হাতের কাছে নাও থাকে, তাহলেও স্মার্টওয়াচের দৌলতে আপনি দ্রুত ভূমিকম্পের খবর পেয়ে যাবেন। যারা এলটিই-এনাবল্ড স্মার্টওয়াচ ব্যবহার করেন এবং ফোন সঙ্গে রাখেন না, তারাও এই ফিচার থেকে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন।
জীবন রক্ষায় কয়েক সেকেন্ডের গুরুত্ব
তবে এই অ্যালার্ট ঠিক কেমন হবে সে বিষয়ে গুগলের পক্ষ থেকে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মতোই হবে। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পূর্ণভাবে রোখা সম্ভব নয়, কিন্তু যদি অন্তত কয়েক সেকেন্ড আগেও এর পূর্বাভাস পাওয়া যায়, তবে তা জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই মূল্যবান কয়েক সেকেন্ড মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে, অন্যদের সতর্ক করতে এবং অনেক প্রাণ বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে।
গুগলের এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে প্রযুক্তি এবং জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে। হাতের স্মার্টওয়াচ এখন থেকে কেবল আপনার স্বাস্থ্যেরই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও সুরক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
