বিশেষ: ২০২৪ সালে স্মার্টফোনে যেভাবে যুক্ত হয়েছে এআই ফিচার, জেনেনিন সেই বিবরণ

বছরজুড়েই চলছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থান। আর এটি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে স্মার্টফোন খাতে। স্যামসাং, গুগল ও অ্যাপলের মত প্রযুক্তি জায়ান্টরা নিজেদের ডিভাইসে এআই টুল প্রবর্তন করার মাধ্যমে এ প্রযুক্তি বিকাশে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা।

অনেক বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তি কোম্পানির মতে এআই ফিচারের অন্যতম বড় বাধা ছিল একে যত বেশি সম্ভব মানুষের সামনে নিয়ে আসা। এরপরেই ফিচারগুলো দৈনন্দিন ব্যবহারের ডিভাইস যেমন স্মার্টফোনে জুড়ে দেওয়ার ট্রেন্ড শুরু হল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।

জানুয়ারিতে প্রথম স্মার্টফোনের জন্য এআই ঘোষণা করে স্যামসাং। কোম্পানির ‘গ্যালাক্সি এআই’-এর মাধ্যমে তাদের ‘গ্যালাক্সি এস২৪’ সিরিজের ফোনের সঙ্গে নতুন সব এআই টুল যুক্ত হয়।

এতে এমন সব ফিচার রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের মেজাজের ওপর নির্ভর করে মেসেজে এডিট করতে ও নতুন করে লিখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, ছবি এডিট, ফোন কল ট্রান্সক্রাইবের জন্যও ছিল এআই ফিচার। অন্যতম বড় চমক ছিল গুগলের মাধ্যমে চালিত টুল, ‘সার্কেল টু সার্চ’, যা ফোনের স্ক্রিনের ওপর থাকা কোনো বস্তুর ওপর বৃত্ত এঁকে গুগল সার্চ করার সুযোগ দিত।

এ বছর গ্রীষ্মের মধ্যে স্যামসাং তাদের নতুন সিরিজের ফোল্ডএবল ডিভাইসেও এসব ফিচার যুক্ত করে। পাশাপাশি এআই টুলগুলোকেও আরও উন্নত করে।

এর কাঙ্ক্ষিত প্রভাব রয়েছে বলেও ধারণা প্রকাশ করেছে কোরিয়ান ফোন নির্মাতা কোম্পানিটি। এ বছর শেষে কোম্পানির এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, গ্যালাক্সি এআই উন্মোচনের পর যুক্তরাজ্যে গ্রাহকদের মধ্যে অ্যাপল আইফোন থেকে স্যামসাং ডিভাইসে সুইচ করার প্রবণতা ৪০ শতাংশ বেড়েছে। তখন পর্যন্ত অবশ্য অ্যাপল যুক্তরাজ্য নিজেদের এআই টুল প্রকাশ করেনি বলে লিখেছে ইনডিপেনডেন্ট।

জেনারেটিভ এআই ফিচার প্রকাশের সময় প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে এগিয়ে থাকার প্রবণতা ছিল ২০২৪-এর অন্যতম ট্রেন্ড। উদাহরণ হিসেবে, গুগল নিজেদের পিক্সেল ৯ সিরিজের ফোনগুলো প্রথাগত সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর সময়ের থেকে এগিয়ে আগস্টেই প্রকাশ করে। সেপ্টেম্বরে অ্যাপল নিজেদের আইফোন ১৬ সিরিজ ও এআই ফিচার উন্মোচনের আগেই যেন তাদের পণ্য গ্রাহকদের হাতে পৌঁছায় এ পদক্ষেপ সে কারণে নেওয়া বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

গুগল গ্রাহকদের কাছে নিজের এআই ফিচার প্রচারের জন্য তাদের নতুন এআই চ্যাটবট জেমিনাই কে ব্যবহার করেছে। অগাস্টে নতুন ফ্ল্যাগশিপ ফোন ঘোষণার সময়ে এটিই ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।

সে সময় টেক জায়ান্ট বলেছে, কীভাবে তাদের নতুন ফোনের নতুন চিপ, গুগল মালিকানাধীন লন্ডনভিত্তিক অন্যতম বড় এআই কোম্পানি ডিপমাইন্ডের সঙ্গে মিলে তারা তৈরি করেছে। এর অর্থ হল, গুগলের ডিভাইস শক্তিশালী এআই মডেল চালাতে পারবে যা কোম্পানির ডিজিটাল সহকারীকে ব্যবহারকারীদের জন্য আরও সহায়ক করবে। পাশাপাশি, এটি গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের সঙ্গে টিউনড হয়ে আরও দ্রুত তথ্য পেতে পারবে।

অ্যাপলের অন্যতম বড় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর এমন স্পষ্ট বিবৃতির অর্থ ছিল, এখন সব নজর আইফোন নির্মাতার ওপরে যে, কীভাবে তারা এ জেনারেটিভ এআইয়ের উত্থান নিজেদের ডিভাইসেও জুড়ে দেয়।

জুন মাসে নিজেদের এআই কেমন হতে পারে তার পূর্বাভাস দেয় অ্যাপল। কোম্পানি এর নাম দেয় ‘অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স’ যা গুগল ও স্যামসাংয়ের টুলের মতোই টেক্সট এডিট করতে, ফোন কলের প্রতিলিপি তৈরিতে, ছবি এডিট করতে বা নতুন ছবি তৈরিতে সহায়তা করতে পারে।

কোম্পানির ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিরি আরও স্মার্ট হয়েছে এবং বিভিন্ন বিষয় বোঝার ক্ষমতাও এসেছে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্সের মাধ্যমে।

কিন্তু সম্ভবত অ্যাপলের পদ্ধতির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ হল ওপেনএআই-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত, যার ফলে সরাসরি মানুষের হাতের মুঠোয় চ্যাটজিপিটি হাজির হয়েছে।

মানুষের প্রাইভেসি ও ডেটা সুরক্ষা বিষয়ে সংবেদনশীল এ সময়ে, ‘প্রাইভেট ক্লাউড কম্পিউট’ নামের একটি ফিচারেও বাড়তি নজর দিয়েছে অ্যাপল। এ ফিচারের মাধ্যমে একটি ডিভাইস অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে জটিল সব প্রশ্ন ডিভাইসের বাইরে পাঠাতে পারে। তবে, সেটি এমন এক সার্ভারে যায় যেখানে এ ডেটা কেউ দেখতে পাবে না এবং উত্তর তৈরি হলেই প্রশ্নগুলো মুছে যাবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট।

অন্যান্য টেক জায়ান্টের তুলনায় এখন পর্যন্ত অ্যাপল এআই টুল আনার বিষয়ে ধীর গতিতেই এগিয়েছে। এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির তুলনায় অ্যাপলের বেশিরভাগ এআই ফিচার অপেক্ষাকৃত কম দেশে ব্যবহার করা যায়। অ্যাপিল বলছে, তারা ইচ্ছা করেই ধীরেসুস্থে এগুলো আনছে কারণ তারা এ নতুন প্রযুক্তিকে আরও যত্ন নিয়ে উন্নত করতে চায়।

বছরের শেষে এসে এখন তিনটি শীর্ষ ফোন নির্মাতা কোম্পানিরই নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ এআই টুল রয়েছে। এর মানে হল বর্তমানে বিশ্বে আগের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মানুষের হাতে এআই টুল রয়েছে।

আর এ পদ্ধতি এরইমধ্যে এআই নিয়ে কাজ করা লোকদেরও প্রভাবিত করেছে। ডিসেম্বরে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটির এমন এক সংস্করণ চালু করেছে যা ব্যবহার করা যাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। অর্থাৎ যে কেউ বিশ্বের যে কোনও জায়গায় অ্যাপটি ডাউনলোড করার বা ওপেনএআই অ্যাকাউন্ট তৈরির প্রয়োজন ছাড়াই চ্যাটবটটি ব্যবহার পারেন।

এমন কেউ যদি থেকে থাকেন যিনি এখনও যথেষ্ট সময় জেনারেটিভ এআই টুল ব্যবহার করেননি, ২০২৫ সালে সম্ভবত এরই মধ্যে ব্যবহৃত ডিভাইসে এআই পেয়ে যেতে পারেন বলে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy