বিশেষ: চাঁদেও মিলল GPS সংকেত, কিন্তু এতে লাভ কী? জেনেনিন কি বলছে বিজ্ঞানীরা?

চাঁদে প্রথমবারের মতো জিপিএস সংকেত সফলভাবে ট্র্যাক করে ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এবং ইতালীয় মহাকাশ সংস্থা। এই যুগান্তকারী সাফল্য অর্জিত হয়েছে ‘লুনার জিএনএসএস রিসিভার এক্সপেরিমেন্ট’ বা লুগ্রে-এর মাধ্যমে, যা ২০২৪ সালের ৩ মার্চ চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত চলাচলের বিভিন্ন সংকেত ট্র্যাক করতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এই সাফল্য প্রমাণ করে যে, যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস এবং ইউরোপের গ্যালিলিওর মতো ‘গ্লোবাল ন্যাভিগেশন স্যাটেলাইট সিস্টেম’ (জিএনএসএস) সংকেত পৃথিবীর বাইরেও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ভবিষ্যতের চন্দ্র মিশন, যেমন নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম এবং অন্যান্য মহাকাশ অভিযানে ন্যাভিগেশনকে আরও নির্ভুল ও সহজ করতে পারে। এছাড়া মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য ন্যাভিগেশন প্রযুক্তি উন্নত করতেও এটি একটি বড় পদক্ষেপ।

নাসার কর্মকর্তা কেভিন কগিনস বলেছেন, “পৃথিবীতে আমরা স্মার্টফোন থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ সবকিছুর জন্য জিপিএস ব্যবহার করি। এখন লুগ্রে দেখিয়েছে যে আমরা চাঁদেও এই সংকেত ব্যবহার করতে পারি। এটি চাঁদে ন্যাভিগেশনের জন্য একটি রোমাঞ্চকর অগ্রগতি।”

২০২৪ সালের ২ মার্চ মার্কিন বেসরকারি কোম্পানি ‘ফায়ারফ্লাই এরোস্পেস’-এর ‘ব্লু গোস্ট’ নামের লুনার ল্যান্ডার চাঁদের মাটি স্পর্শ করার পরই এই মাইলফলকের যাত্রা শুরু হয়। ‘ব্লু গোস্ট’ ল্যান্ডারটি নাসার ১০টি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের মধ্যে একটি হিসাবে লুগ্রে বহন করেছিল। অবতরণের কিছুক্ষণ পরেই পৃথিবী থেকে জিএনএসএস সংকেত ট্র্যাক করা যায় কি না তা পরীক্ষা করার জন্য নাসার বিজ্ঞানীরা ‘গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টার’-এ ডিভাইসটি নিয়ে কাজ শুরু করেন।

৩ মার্চ রাত ২টায় নাসা নিশ্চিত করে যে, লুগ্রে সফলভাবে চাঁদের পৃষ্ঠে জিপিএস ও গ্যালিলিও সংকেত ট্র্যাক করেছে। এমনকি এটি পৃথিবী থেকে দুই লাখ ২৫ হাজার মাইল দূরে থেকেও সংকেত গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে। নাসার এই মিশনটি ১৪ দিন ধরে তথ্য সংগ্রহ চালিয়ে যাবে, যা চাঁদ অভিযানের জন্য জিএনএসএস-এর ব্যবহার সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে।

চাঁদে যাওয়ার পথে লুগ্রে বেশ কয়েকটি রেকর্ডও গড়েছে। ২১ জানুয়ারি এটি পৃথিবী থেকে দুই লাখ ৯ হাজার ৯০০ মাইল উচ্চতা থেকে জিপিএস সংকেত গ্রহণ করে, যা নাসার ‘ম্যাগনেটোস্ফেরিক মাল্টিস্কেল’ মিশনের রেকর্ড ভেঙে দেয়। গত ২০ ফেব্রুয়ারি পৃথিবী থেকে ২ লাখ ৪৩ হাজার মাইল দূরে চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছানোর পর থেকেই এটি একের পর এক রেকর্ড ভাঙতে থাকে।

এই সাফল্য থেকে ইঙ্গিত মেলে যে, পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যবর্তী অঞ্চল অর্থাৎ সিসলুনার স্পেসে থাকা বিভিন্ন মহাকাশযানও চলাচলের জন্য জিএনএসএস-এর ওপর নির্ভর করতে পারে। প্রচলিতভাবে পৃথিবীতে থাকা অ্যান্টেনা ও অনবোর্ড সেন্সর ব্যবহার করে মহাকাশযানের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু লুগ্রে-এর সাফল্য প্রমাণ করে যে, জিএনএসএস সংকেত ব্যবহার করে মহাকাশযান অনেক দূর থেকেও স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে মহাকাশ ভ্রমণকে আরও কার্যকর ও নিরাপদ করে তুলতে পারে।

এই অভূতপূর্ব সাফল্য মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতের চন্দ্র ও মঙ্গল অভিযানের জন্য ন্যাভিগেশন প্রযুক্তিকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy