
গ্রীষ্মের অসহ্য গরমে আরাম পেতে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির উপর নির্ভর করেন অনেকেই। তবে বিদ্যুৎ বিলের বোঝা, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ এবং পরিবেশগত প্রভাবের কথা ভেবে সবসময় এসি চালানো অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ভরসা কেবল ফ্যান। কিন্তু শুধু ফ্যান চালিয়ে কি সত্যিই ঘর ঠান্ডা রাখা সম্ভব? হ্যাঁ, কিছু কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করলে শুধুমাত্র ফ্যানের সাহায্যেই ঘরকে অনেকটাই ঠান্ডা রাখা যেতে পারে।
জেনে নিন গরমে এসি ছাড়াই ফ্যান দিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখার কয়েকটি কার্যকর উপায়:
১. ফ্যান ব্যবহারের সঠিক কৌশল:
* সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন দিক: গ্রীষ্মকালে সিলিং ফ্যান যেন ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে, তা নিশ্চিত করুন। এই সেটিংয়ে ফ্যান বাতাসকে নিচের দিকে ঠেলে দেয়, যা শরীরে শীতল অনুভূতি তৈরি করে।
* ডেস্ক বা স্ট্যান্ড ফ্যানের অবস্থান: যদি রাতের মতো বাইরের বাতাস তুলনামূলক ঠান্ডা হয়, তাহলে ফ্যানটিকে জানালার দিকে মুখ করে রাখুন, যাতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরের ভেতরে আসতে পারে। দিনের বেলা যখন বাইরের বাতাস গরম থাকে, তখন ফ্যানটিকে জানালার বিপরীত দিকে মুখ করে রাখুন, যাতে ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বেরিয়ে যায়।
২. বরফ বা ঠান্ডা জলের ব্যবহার:
* একটি বড় বাটি বা ট্রেতে বরফ অথবা ঠান্ডা জল নিয়ে ফ্যানের ঠিক সামনে রাখুন। ফ্যান যখন চলবে, তখন এটি বরফ বা ঠান্ডা জলের উপর দিয়ে বাতাস টেনে নেবে এবং সেই বাতাস ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে, যা অনেকটাই এসির মতো ঠান্ডা অনুভূতি দেবে। এটি একটি সহজ ঘরে তৈরি কুলার হিসেবে কাজ করে।
৩. পর্দা ও জানালার সঠিক ব্যবহার:
* দিনের বেলা সরাসরি সূর্যের আলো ঘরে প্রবেশ করলে তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যায়। তাই দিনের বেলায় মোটা বা ঘন পর্দা ব্যবহার করে সূর্যের আলো আটকে দিন।
* সূর্য ডোবার আগে বা সন্ধ্যায় যখন বাইরের তাপমাত্রা কমতে শুরু করে, তখন জানালা খুলে দিন যাতে ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে। দিনের উষ্ণতম সময়ে জানালা বন্ধ রাখাই ভালো।
৪. বাতাস চলাচলের পথ তৈরি:
* ঘরের একপাশে একটি জানালা এবং তার সোজাসুজি অন্যপাশে আরেকটি জানালা খুলে দিন। এতে বাতাসের স্বাভাবিক প্রবাহ তৈরি হবে, যা ‘ক্রস ভেন্টিলেশন’ নামে পরিচিত। ফ্যানের সাহায্যে এই বাতাস প্রবাহকে আরও বাড়ানো যেতে পারে। রান্নাঘরের গরম বাতাস বের করার জন্য যেমন এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করা হয়, তেমনই প্রয়োজন অনুযায়ী ঘরের অন্য অংশেও এক্সজস্ট ফ্যান ব্যবহার করে গরম বাতাস বের করে দেওয়া যেতে পারে।
৫. তাপের উৎস কমানো:
* ঘরে অপ্রয়োজনে বেশি আলো জ্বালানো থেকে বিরত থাকুন, কারণ বাল্ব বা লাইট তাপ উৎপন্ন করে। সম্ভব হলে এলইডি লাইট ব্যবহার করুন, কারণ এগুলো কম তাপ ছড়ায়।
* দিনের বেলায় রান্না করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ রান্নাঘরের তাপ সহজেই পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৬. ঘরের সাজসজ্জা ও রঙের প্রভাব:
* ঘরের দেওয়াল, পর্দা বা বিছানার চাদরের জন্য হালকা রং বেছে নিন। হালকা রং তাপ প্রতিফলিত করে, ফলে ঘর ঠান্ডা থাকে। গাঢ় রং বা ভারী কাপড় তাপ শোষণ করে ধরে রাখে, তাই এগুলো গ্রীষ্মকালে এড়িয়ে চলাই ভালো।
৭. রাতে ঘর ঠান্ডা রাখা:
* রাতে বাইরের বাতাস সাধারণত দিনের চেয়ে অনেক ঠান্ডা থাকে। এই সময় ঘরের জানালা খুলে ফ্যান চালালে ঠান্ডা বাতাস সহজেই ভেতরে প্রবেশ করে ঘরকে শীতল করে তোলে। বিছানায় হালকা সুতির চাদর ব্যবহার করলে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
এই সহজ ও কার্যকর পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে গ্রীষ্মের তীব্র গরমেও এসি ছাড়াই ফ্যানের সাহায্যে আপনি আপনার ঘরকে অনেকটাই আরামদায়ক ও ঠান্ডা রাখতে পারবেন।