
ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে ফেসবুক শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং লক্ষাধিক মানুষের আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। পণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে কন্টেন্ট তৈরি—সবকিছুতেই এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দাপট। তবে বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক অনলাইন বাজারে কেবল পণ্যের ছবি বা ভিডিও যথেষ্ট নয়; ক্রেতারা এখন এমন কন্টেন্ট চাইছেন, যা দেখে সরাসরি কেনাকাটা করতে পারবেন। আর এখানেই যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে ‘শপেবল ভিডিও’।
শপেবল ভিডিও হলো এমন এক ফরম্যাট, যেখানে ব্যবহারকারীরা ভিডিও দেখার সময়ই সরাসরি প্রোডাক্টে ক্লিক করে তা কিনতে পারেন। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম এই ফিচারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এটি ই-কমার্স ব্যবসার ‘কনভার্সন রেট’ (বিক্রয়ের হার) উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়।
তাহলে, কীভাবে এই শপেবল ভিডিও তৈরি করে আপনার অনলাইন ব্যবসার আয় বাড়াবেন? জেনে নিন কার্যকর কিছু কৌশল:
১. প্রাসঙ্গিক ও সমস্যাভিত্তিক স্ক্রিপ্ট লিখুন: আপনার পণ্যের মূল লক্ষ্য কী, তা ভিডিওর শুরুতেই স্পষ্ট করুন। যদি আপনি ত্বকের যত্নের পণ্য বিক্রি করেন, তাহলে ভিডিওটি শুরু করুন ত্বকের কোনো সাধারণ সমস্যা তুলে ধরে। স্ক্রিপ্ট এমনভাবে লিখুন যাতে মনে হয় আপনি ব্যবহারকারীর সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন। দর্শককে ৩০-৪৫ সেকেন্ডের মধ্যে আপনার বার্তাটি পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দিন। শুরুতেই ব্যবহারকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি।
২. পণ্যের বাস্তব ব্যবহার ও ফলাফল দেখান: শুধু পণ্যের ছবি বা সুন্দর প্যাকেজিং দেখিয়ে ক্রেতার মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন। আপনার ভিডিওতে পণ্যের ব্যবহারের বাস্তব চিত্র, আগে ও পরের ফলাফল, অথবা কোনো ব্যবহারকারীর সত্যিকারের প্রতিক্রিয়া (রিয়েল রিয়েকশন) দেখান। উদাহরণস্বরূপ, কেউ যদি আপনার স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করছে, তবে স্ক্রিনে টেক্সট দিন: ‘৭ দিন/১০ দিনের ফলাফল’। এটি বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।
৩. ভিডিওতে ‘শপ নাউ’ / ‘ট্যাপ টু বাই’ বোতাম যুক্ত করুন: শপেবল ভিডিওর মূল আকর্ষণই হলো সরাসরি কেনাকাটার সুযোগ। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রাম শপ-সাপোর্টেড ভিডিও আপলোড করার সময় আপনি সহজেই পণ্য ট্যাগ করতে পারবেন। ভিডিওর উপর পণ্যের দামসহ শপিং ট্যাগ দিয়ে দিন, অথবা সরাসরি ‘শপ নাউ’ বোতাম যুক্ত করুন। ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে প্রোডাক্ট স্টিকার যুক্ত করার অপশনও রয়েছে। ফেসবুক কমার্স ম্যানেজার ব্যবহার করে আপনার পণ্যের লিঙ্ক সংযুক্ত করতে ভুলবেন না।
৪. রিলস বা স্টোরি ফরম্যাটে ভিডিও তৈরি করুন: ফেসবুক রিলস ও ইনস্টাগ্রাম স্টোরিসে এখন ব্যবহারকারীর এনগেজমেন্ট সবচেয়ে বেশি। শপেবল ফিচার এই ফরম্যাটগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিউ পায়। মোবাইল ফার্স্ট দর্শকদের জন্য রিলসগুলো বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। তাই আপনার শপেবল ভিডিওগুলো রিলস ও স্টোরিতে শেয়ার করুন, কারণ এতে দৃশ্যমানতা এবং পৌঁছানো (reach) বৃদ্ধি পাবে।
৫. চমকপ্রদ ক্যাপশন ও হ্যাশট্যাগ লিখুন: ভিডিওর সাথে একটি আকর্ষণীয় এবং কার্যকর ক্যাপশন অপরিহার্য। ‘এখনই অর্ডার করুন, অফার চলবে সীমিত সময়!’—এ ধরনের ক্যাপশন সহজেই মানুষের নজরে পড়ে এবং তাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। এছাড়া, সঠিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করুন, যেমন: #ShopWithMe #SkincareBangladesh #BuyNowBD, যা আপনার কন্টেন্টকে টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।
৬. পণ্যের ইউজার রিভিউ যুক্ত করুন: ভিডিওর শেষে ৫-১০ সেকেন্ডের একটি সংক্ষিপ্ত ‘টেস্টিমোনিয়াল’ (User Review) যুক্ত করুন। যেমন, কোনো ব্যবহারকারীকে বলতে শোনা যেতে পারে, “আমি ২ সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করছি, আর ত্বকে সত্যিই পরিবর্তন টের পাচ্ছি!” এটি আপনার পণ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে এবং দর্শককে পণ্যটি কিনতে উৎসাহিত করবে।
৭. টার্গেট অডিয়েন্সে ভিডিও বুস্ট করুন: আপনার শপেবল ভিডিওকে সঠিক দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে ফেসবুক অ্যাডস ম্যানেজার ব্যবহার করে ভিডিওটি বুস্ট করুন। আপনার পণ্যের উপযোগী বয়স, লিঙ্গ এবং ভৌগোলিক অবস্থান (যেমন: শুধুমাত্র বাংলাদেশ বা নির্দিষ্ট শহর) টার্গেট করতে পারেন। কম বাজেটে বেশি রিটার্ন (ROI) পেতে রিলস এবং স্টোরি বুস্ট বর্তমানে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম।
স্মার্টফোনের মাধ্যমে এই শপেবল ভিডিও তৈরি করে আপনি আপনার অনলাইন ব্যবসাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন এবং ডিজিটাল যুগে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে পারেন।