প্রম্পট ছাড়াই মেসেজ পাঠানোর জন্য এআইকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মেটা, শুরু হয়েছে ট্রায়াল

মার্ক জাকারবার্গের মালিকানাধীন মেটা একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ফিচার নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের সঙ্গে চ্যাটবটের কথোপকথনের পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। এই নতুন ফিচারের মাধ্যমে কাস্টমাইজড চ্যাটবটগুলো তাদের আগের কথোপকথন মনে রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফলোআপ মেসেজ পাঠাতে সক্ষম হবে।

ডেটা লেবেলিং কোম্পানি অ্যালিগনারের নামে এই উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রশিক্ষণ প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রজেক্ট ওমনি’। বিজনেস ইনসাইডারের প্রকাশিত নথি অনুযায়ী, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন মূল্য সংযোজন করা এবং তাদের প্ল্যাটফর্মে ধরে রাখার হার উন্নত করা।

এআই স্টুডিও: ব্যবহারকারীর পছন্দের এআই চরিত্র তৈরি

মেটা তাদের এআই স্টুডিও প্ল্যাটফর্মকে এমনভাবে প্রচার করছে, যেখানে “যে কেউ তার আগ্রহ অনুযায়ী একটি এআই চরিত্র তৈরি করতে পারবে।” মেটা ক্রিয়েটরদের এসব বটকে নিজেদের এআই রূপ হিসেবে কল্পনা করতে বলছে। এর মাধ্যমে চ্যাটবটগুলোর চেহারা কাস্টমাইজ করা, কোন ধরনের কনটেন্টের ওপর বটটি প্রশিক্ষিত হবে তা বেছে নেওয়া এবং মেটার মালিকানাধীন কোন অ্যাপে এটি ব্যবহার করা হবে তা নির্ধারণ করা—এসব কিছুই কারিগরি জ্ঞান ছাড়াই সম্ভব হবে।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে অ্যালিগনারের ‘প্রজেক্ট ওমনি’ গাইডলাইনে একটি চলচ্চিত্রভিত্তিক এআই বটের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, যার নাম ‘দ্য মায়েস্ত্রো অফ মুভি ম্যাজিক’। এই বটটি ব্যবহারকারীর কাছে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠাতে পারে, যেমন: “আশাকরি আপনার দিনটা সুন্দর কেটেছে! আমি জানতে চাচ্ছিলাম, আপনি কি সম্প্রতি কোনো নতুন প্রিয় সাউন্ডট্র্যাক বা সংগীত পরিচালক খুঁজে পেয়েছেন? নাকি আপনি আপনার পরবর্তী মুভি নাইটের জন্য কিছু সাজেশন চান? আমাকে জানাবেন, আমি সাহায্য করতে পেরে খুশি হব।”

মেটার ব্যবসায়িক লক্ষ্য ও এআই থেকে বিশাল আয়

বিজনেস ইনসাইডারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ব্যবহারকারীদের চ্যাটবটগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ সময় সম্পৃক্ত রাখা মেটার জন্য ব্যবসায়িকভাবে অত্যন্ত লাভজনক। কারণ, দীর্ঘস্থায়ী সম্পৃক্ততা রেভিনিউ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মেটা আশা করছে, এই বছর শুধু জেনারেটিভ এআই থেকেই তারা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি ডলার আয় করবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে এই আয় বেড়ে ১৪ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলেও কোম্পানিটি অনুমান করছে।

এই ধরনের বিশাল আয়ের অনুমান তখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব, যখন মেটার এআই টুলগুলো নিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হবে। তাই মাঝে মাঝে চ্যাটবটগুলোর বন্ধুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা পাঠানো মেটার পক্ষ থেকে একটি স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় কৌশল বলেই উল্লেখ করেছে প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট এনগ্যাজেট।

ব্যবহারকারীর অনুমতি ও তথ্যের সুরক্ষায় উদ্বেগ

তবে, এই মেসেজগুলো এখন পর্যন্ত টেস্ট ফিচার হিসেবেই রয়েছে। ব্যবহারকারী চাওয়ার আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে চ্যাটবটগুলোর পূর্ববর্তী কথোপকথন মনে রেখে নতুন মেসেজ দেওয়া কিছুটা ব্যবহারকারীর অনুমতির লঙ্ঘন বলে মনে হতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করছেন অনেকে।

তবে বিজনেস ইনসাইডারকে দেওয়া এক বিবৃতিতে মেটার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “যদি ব্যবহারকারী প্রথমে কথোপকথন শুরু করেন, তবেই কেবল এআই একটি ফলোআপ মেসেজ পাঠাবে। ওই মেসেজের উত্তর না দিলে আর কোনো মেসেজ পাঠানো হবে না।” তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “উত্তরগুলো অবশ্যই এআইয়ের ব্যক্তিত্ব ও আগের কথোপকথনের ধরন অনুযায়ী হতে হবে। বিতর্কিত বা সংবেদনশীল বিষয়ের দিকে যাওয়া যাবে না, যদি না ব্যবহারকারী নিজেই সেগুলো তোলেন। মেসেজগুলোতে সবসময় ইতিবাচক টোন বজায় রাখতে হবে।”

উল্লেখ্য, গত মাসে মেটা তার ব্যবহারকারীদের মেটা এআই-এর পাবলিক ফিডে অন্তরঙ্গ কোনো তথ্য শেয়ার না করার জন্য সতর্ক করেছে। কারণ, অনেক ব্যবহারকারী অসাবধানতাবশত ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করছেন বলে জানা গেছে। নতুন এই ফিচারটি চালু হলে ব্যবহারকারীর তথ্যের গোপনীয়তা ও সুরক্ষা আরও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Related Posts

© 2025 News - WordPress Theme by WPEnjoy