
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নতুন বিলে স্বাক্ষর করে এটিকে আইনে পরিণত করেছেন, যা অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে এবং ‘রিভেঞ্জ পর্ন’ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দ্বারা তৈরি ‘ডিপফেইক’ কনটেন্ট ইন্টারনেটে পোস্ট করাকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প এই নতুন আইনকে অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষায় একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসা করেছেন।
‘টেক ইট ডাউন অ্যাক্ট’ (Take It Down Act) নামে পরিচিত এই নতুন আইন অনুযায়ী, কারো অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত বা ঘনিষ্ঠ ছবি বা ভিডিও (আসল হোক বা এআই দিয়ে বানানো হোক) ইন্টারনেটে পোস্ট করা এখন থেকে অপরাধ বলে গণ্য হবে। একইসঙ্গে, এ ধরনের কনটেন্ট সম্পর্কে কেউ রিপোর্ট করলে বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানিকে তা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে হবে।
‘রিভেঞ্জ পর্ন’ বলতে বোঝানো হচ্ছে কারো ব্যক্তিগত বা অন্তরঙ্গ ছবি বা ভিডিও তার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা। অন্যদিকে, ‘ডিপফেইক পর্ন’ বলতে সাধারণত এআই ব্যবহার করে কোনো ব্যক্তির নকল বা অশ্লীল ছবি বা ভিডিও তৈরি করাকে বোঝায়।
বিবিসি জানিয়েছে, রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলেরই শক্ত সমর্থন পেয়েছে এই বিলটি। তবে কিছু ডিজিটাল অধিকার সংগঠন বলছে, আইনটির পরিসর খুব বেশি বিস্তৃত। এতে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা সেন্সরশিপ বেড়ে যেতে পারে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই আইনের পক্ষে প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, অনলাইনে শিশুরা যাতে খারাপ কথা বা আচরণ থেকে নিরাপদ থাকে, সেটি নিশ্চিত করা দরকার। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, এই বিলটি কংগ্রেসে পাশ করাতে মেলানিয়া ট্রাম্প “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” ভূমিকা রেখেছেন।
কম জনসমক্ষে আসা ফার্স্ট লেডি এই নতুন আইনকে “একটি জাতীয় বিজয়” বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, আইনটি “মা-বাবা ও বিভিন্ন পরিবারকে শিশুদের অনলাইন নিপীড়ন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে”। মেলানিয়া ট্রাম্প আরও বলেছেন, “এ আইনটি আমাদের জন্য শক্তিশালী এক পদক্ষেপ, যা নিশ্চিত করবে, প্রতিটি আমেরিকান, বিশেষ করে তরুণরা তাদের ছবি বা পরিচয়ের অপব্যবহার থেকে আরও ভালোভাবে রক্ষা পাবে।”
গত এপ্রিল মাসে মার্কিন কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষে ৪০৯-২ ভোটে এবং ফেব্রুয়ারিতে সিনেটে সর্বসম্মতিক্রমে এই আইন পাস হয়। মার্চে প্রথম এককভাবে সবার সামনে এসে কংগ্রেস সদস্যদের বিলটি পাস করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন মেলানিয়া ট্রাম্প। ৩ মার্চ বিলটি নিয়ে আলোচনার সময় ফার্স্ট লেডি বলেছিলেন, “খারাপ অনলাইন কনটেন্ট বিশেষ করে ডিপফেইক নিয়ে মেয়েরা যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে সেটি দেখা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।”
বিবিসি আরও জানিয়েছে, রিভেঞ্জ ও ডিপফেইক পর্ন প্রযুক্তির ব্যবহার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। এর মাধ্যমে সেলিব্রিটি বা সাধারণ মানুষের মুখ, বিশেষ করে নারীদের, পর্নোগ্রাফিক ভিডিওতে যোগ করা হচ্ছে। অভিনেত্রী ও ডিজে প্যারিস হিলটন এই বিলটিকে সমর্থন করেছেন এবং এটিকে “অনলাইনে অনুমতি ছাড়া ছবি শেয়ার বন্ধ করার দিকে গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ” বলে বর্ণনা করেছেন। মেটা, টিকটক ও গুগলের মতো মার্কিন বিভিন্ন প্রযুক্তি জায়ান্টও এই আইনটিকে সমর্থন করেছে।
এই নতুন আইনটি অনলাইনে যৌন নির্যাতন এবং অপব্যবহার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।