ট্রাম্পের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ, কারা ব্যবহার করেন? জেনেনিন বিস্তারিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ (Truth Social) ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেকটা ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এর আদলে তৈরি এই প্ল্যাটফর্মটি মূলত মার্কিন রক্ষণশীল এবং ট্রাম্প-সমর্থকদের জন্য একটি ডেডিকেটেড স্পেস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে, যেখানে অপ্রচলিত বক্তব্য এবং ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের প্রচার তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।

প্ল্যাটফর্মের বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার:

অন্যান্য জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম অ্যাপের মতোই, অ্যান্ড্রয়েড বা আইওএস অ্যাপ অথবা ওয়েবসাইট truthsocial.com থেকে নাম, ই-মেইল এবং ফোন নম্বর ব্যবহার করে ট্রুথ সোশ্যালে নিবন্ধন করা যায়। ব্যবহারকারীরা নিজেদের ইউজারনেম, ছবি এবং বায়ো তৈরি করতে পারেন। ৫০০ অক্ষর পর্যন্ত টেক্সট, ছবি এবং লিঙ্ক আদান-প্রদান করা যায় ‘ট্রুথ’ বাটনে ক্লিক করে। ব্যবহারকারীরা অন্যের ‘ট্রুথ’ শেয়ার করতে, লাইক দিতে, মন্তব্য করতে এবং রিপ্লাই দিতে পারেন। এছাড়া, থিমভিত্তিক গ্রুপে যোগ দিয়ে সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নেওয়া যায়। সম্প্রতি নিরাপত্তা ও এক্সপ্লোরার সুবিধা নিয়ে গ্রুপ ফিচার আপডেট হয়েছে।

গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা:

প্ল্যাটফর্মটির প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি বেশ শক্তিশালী। এতে অ্যাকাউন্ট পাবলিক/প্রাইভেট করার অপশন, ব্লক/মিউট/রিপোর্ট করার সুবিধা এবং টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ফিচার রয়েছে। ২০২৪ সালে ‘ট্রুথ কয়েনস’ নামে প্ল্যাটফর্ম-সংক্রান্ত একটি ক্রিপ্টোকারেন্সিও চালু হয়েছে। ব্যবহারকারীরা পছন্দের ব্যবহারকারী বা গ্রুপ ফলো করে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু ঘনিষ্ঠভাবে খুঁজে পেতে পারেন। ট্রাম্প নিজে বর্তমানে দিনে তিন হাজারেরও বেশি ‘ট্রুথ’ পোস্ট করছেন, যা এই প্ল্যাটফর্মে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতির প্রমাণ।

‘স্বাধীন মত প্রকাশের’ প্রতিশ্রুতি ও সীমাবদ্ধতা:

ট্রুথ সোশ্যাল ‘স্বাধীন মত প্রকাশের’ প্রতিশ্রুতি দিলেও, তুলনামূলকভাবে এখানে নিয়ন্ত্রণের অভাব দেখা যায়। যদিও অবৈধ বা কপিরাইট লঙ্ঘন সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করা হয়, প্ল্যাটফর্মে প্রায়শই ঘৃণা, ষড়যন্ত্রমূলক পোস্ট এবং মিথ্যাবাদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি মূলত ট্রাম্প-পন্থী রাজনীতিবিদ এবং তাদের সমর্থকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়, ফলে রাজনৈতিক আলোচনার ধারা এখানে একপেশে হতে পারে।

বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য, আগ্রহ নির্দিষ্ট শ্রোতা এলাকায় বিজ্ঞাপন প্রদানের টুল এবং সম্পূর্ণ ডেটা অ্যানালিটিক্স সহ সুবিধা রয়েছে। যদিও ফেসবুক বা টিকটকের মতো বড় প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে এর তুলনা চলে না, তবে মার্কিন রক্ষণশীল মহলে জনমত তৈরি বা দৃঢ়করণে ট্রুথ সোশ্যাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সীমিত ব্যবহার এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জ:

বর্তমানে প্ল্যাটফর্মটির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন। এটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, জাপান, জার্মানি, তুরস্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহার করা যায়। তবে বর্তমানে শুধু আমেরিকা এবং কানাডাতেই এই অ্যাপ ব্যবহার করা যাচ্ছে। ট্রাম্প মিডিয়া এখনও লাভজনক হতে পারেনি এবং বিনিয়োগকারীদের নির্ভরতার কারণে এর স্টককে ‘মেমে স্টক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা এর আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ট্রুথ সোশালের ভবিষ্যৎ গতিপথ কী হবে, তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy