৯০-এর দশকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে একমাত্র ভরসা ছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। ব্রাউজারটি তার ২৭ বছরের যাত্রা শেষ করলো গত ১৫ জুন। ঘোষণা দিয়েই এক সময়কার জনপ্রিয় ব্রাউজারটিকে বিদায় জানিয়েছে মাইক্রোসফট।
আদি এই ব্রাউজার জনপ্রিয়তা হারিয়েছিল মোজিলা এবং ক্রোমের সূচনাকালেই। তারপরও এত দিন এর অস্তিত্ব রেখেছিল মাইক্রোসফট। ১৯৯৫ সালে জন্ম এই ব্রাউজারটির। ২০০৩ সালে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। সেই সময় বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত সব ইন্টারনেট ব্রাউজারের ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ধরে রেখেছিল। যদিও প্রতিযোগী কোম্পানিগুলো একের পর এক ব্রাউজার তৈরি করে বাজারে আনার কারণে ধীরে ধীরে এই আইকনিক ব্রাউজারের জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করে।
যে কারণে ২০১৬ সালেই এই ব্রাউজারের ফিচার ডেভেলপমেন্টের কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মাইক্রোসফট। সেসময় মাইক্রোসফট নিয়ে আসে তাদের নতুন ব্রাউজার এডজ। এরপর থেকে নতুন ব্রাউজারের উপরে মনোনিবেশ শুরু করে মার্কিন সংস্থাটি। যে কারণে ধীরে ধীরে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের দিকে নজর আরও কমে যায় মাইক্রোসফটের। ফলাফল ব্যবহারকারী শূন্য হতে থাকে এক সময়ের জনপ্রিয় ব্রাউজারটি।
এবার আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে এ ব্রাউজার। মাইক্রোসফট সংস্থা জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও গতিময় ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য নতুন ব্রাউজারগুলো ব্যবহার করতে।
তবে ৯০-এর দশক কিংবা ২০০০ গোড়ার দিকে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন, তারা অনেকেই সেই ব্রাউজারকে ভুলতে পারছেন না। এখনো বিদায় জানাচ্ছেন সজল নয়নে। তেমনই একজন দক্ষিণ কোরিয়ার ইঞ্জিনিয়ার জুং কি-ইয়ং।
জুং ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের স্মৃতিতে বানালেন এর সমাধি। এজন্য তার খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৩০০ ডলার। যার মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের উদ্দেশে লিখলেন ভালবাসার বার্তাও। সেই সমাধির এপিটাফে লেখা হয়েছে, ‘অন্য ব্রাউজার ডাউনলোড করার জন্য বেশ ভালো একটি ব্যবস্থা ছিল সে।’ জুংয়ের এই বার্তার সঙ্গে অবশ্য অনেকেই একমত। এপিটাফটি বানাতে জুংয়ের লেগেছে এক মাস এবং খরচ হয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ওন।
কারণ গত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রোম বা অন্য গতিময় ব্রাউজার ডাউলোড করার জন্য অনেকেই ব্যবহার করছিলেন ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। কারণ এক সময়ে অধিকাংশ কম্পিউটারে শুরু থেকে শুধু ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারই দেওয়া থাকত। তাই ব্যবহারকারীরাও ভাবতেন, অন্য ব্রাউজার পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ এটিই।
জুংকে এক্সপ্লোরারের সম্পর্কে বলেন, ‘এ এক ভালো মন্দ মেশানো সম্পর্ক যেন। এক সময়ে খুব বিরক্ত লাগত, আবার অন্য সময়ে সুবিধাও হত। একটি যুগে এক্সপ্লোরারের বিকল্প তো ছিল না!’
সূত্র: রয়টার্স