
ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সএআই (xAI) তাদের গ্রোক (Grok) চ্যাটবটের জন্য একটি যুগান্তকারী নতুন ফিচার ‘গ্রোক ভিশন’ (Grok Vision) উন্মোচন করেছে। এই অত্যাধুনিক ফিচারের সাহায্যে ব্যবহারকারীরা এখন তাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরা কোনও বস্তু, সাইনবোর্ড বা ডকুমেন্টের দিকে তাক করালেই গ্রোক সেই বস্তুটিকে চিহ্নিত করতে পারবে এবং প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে।
গত মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) এক ঘোষণায় এক্সএআই জানিয়েছে, আপাতত শুধুমাত্র আইওএস (iOS) ব্যবহারকারীরাই গ্রোক অ্যাপের মাধ্যমে এই ‘ভিশন’ ফিচারটি ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। অ্যান্ড্রয়েড (Android) সংস্করণের জন্য এটি এখনো চালু হয়নি।
‘গ্রোক ভিশন’ ছাড়াও, সম্প্রতি গ্রোকে আরও কিছু আকর্ষণীয় সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বহু ভাষায় অডিও সাপোর্ট (audio support) এবং রিয়েল-টাইম সার্চ (real-time search) সুবিধা, যা গ্রোকের ‘ভয়েস মোডে’ (Voice Mode) পাওয়া যাবে। তবে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা আপাতত এই অডিও ও সার্চ সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারবেন শুধুমাত্র মাসিক ৩০ ডলারের সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক ‘সুপারগ্রোক’ (SuperGrok) প্ল্যানে।
এক্সএআইয়ের নতুন ‘ভিশন’ ফিচারের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গ্রোক এখন কেবল শব্দ বা লেখা নয়, ছবি এবং দৃশ্যও বুঝতে পারছে। প্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই দৃষ্টিশক্তি-সম্পন্ন ফিচারটি ই-কমার্স (e-commerce), শিক্ষা (education) ও স্বাস্থ্যসেবা (healthcare) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করতে পারে। চিকিৎসাক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করে ছবির মাধ্যমে প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে বই, বোর্ড বা প্রকল্পের চিত্র বিশ্লেষণ করে ছাত্রছাত্রীদের কঠিন বিষয় বুঝতে সহায়তা করতে পারবে গ্রোক। এমনকি গ্রাফিক ডিজাইন (graphic design) কিংবা পণ্যের নকশা (product design)-এর মতো সৃজনশীল কাজেও এই ফিচারটি একটি দক্ষ ডিজিটাল সহকারী হিসেবে কাজ করবে।
এই ধরনের উন্নত ‘ভিশন’ ফিচার যুক্ত হওয়ার ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিযোগিতার ময়দানে এক্সএআই এখন আর কেবল একজন নতুন প্রতিযোগী নয়। বরং এটি ওপেনএআই (OpenAI) এবং গুগল (Google)-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে।
এছাড়াও, সম্প্রতি চ্যাটবট গ্রোকে বেশ কিছু নতুন ফিচার যুক্ত হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতেই এর সঙ্গে ‘মেমোরি’ (Memory) নামের একটি নতুন ফিচার যোগ হয়েছে, যা ব্যবহারকারীর সঙ্গে পূর্ববর্তী কথোপকথনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, ডকুমেন্ট বা অ্যাপ তৈরির মতো কাজের জন্যও কিছু সহায়ক টুল নিয়ে এসেছে গ্রোক। এই ‘মেমোরি’ ফিচারের মাধ্যমে গ্রোক ব্যবহারকারীর পছন্দ, অভ্যাস এবং আগ্রহের মতো তথ্যগুলি মনে রাখতে পারে, যা ভবিষ্যতের কথোপকথন এবং পরামর্শকে আরও ব্যক্তিগত ও নিখুঁত করে তোলে। ব্যবহারকারীরা চাইলে গ্রোক তাদের কোন কোন তথ্য মনে রেখেছে, তা সরাসরি দেখতে পারবেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট ‘মেমোরি’ মুছেও ফেলতে পারবেন।
এই ‘মেমোরি’ ফিচারটি বর্তমানে বেটা সংস্করণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রোকের ওয়েবসাইট এবং গ্রোকের আইওএস ও অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ— উভয় প্ল্যাটফর্মেই চালু করা হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) এবং যুক্তরাজ্যে (UK) এটি এখনো চালু হয়নি।
এক্সএআইয়ের গ্রোক এখন কেবল কথোপকথনের সীমা ছাড়িয়ে বাস্তব জগতের সঙ্গে আরও গভীর সংযোগ স্থাপনের পথে এগিয়ে চলেছে। এর ফলে দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার যে আরও গভীরভাবে যুক্ত হবে এবং নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে, তা বলাই বাহুল্য।
(তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ ও টাইমস অব ইন্ডিয়া)