মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নিষিদ্ধ হচ্ছে ডিপসিকবিশেষ, জেনেনিন কেন?

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের সব ধরনের সরকারি ডিভাইসে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল ডিপসিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে কর্মীদের উদ্দেশে পাঠানো একটি ইমেইলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “তথ্য ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সব সরকারি ডিভাইসে নতুন চীনা এআই কোম্পানি ডিপসিকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।”

ইমেইলে আরও বলা হয়েছে, “ডিপসিক ব্যবহার করে কোনো অ্যাপ্লিকেশন, ডেস্কটপ অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ডাউনলোড করবেন না, দেখবেন না বা এর মাধ্যমে কোনো লিঙ্কে প্রবেশ করবেন না।” এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে মন্ত্রণালয় সাড়া দেয়নি। নিষেধাজ্ঞার পূর্ণ পরিসর সম্পর্কেও এখনো স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।

ডিপসিকের উত্থান ও বিতর্ক

চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের পর থেকেই ডিপসিক তার সাশ্রয়ী মূল্যের এআই মডেল দিয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে। ওই সময় অ্যাপল স্টোরে ফ্রি অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপ ছিল ডিপসিক। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার পাশাপাশি উদ্বেগও দেখা দিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তা ও কংগ্রেস সদস্যরা ডিপসিকের মাধ্যমে ডেটা গোপনীয়তা এবং সংবেদনশীল সরকারি তথ্যের নিরাপত্তার প্রতি সম্ভাব্য হুমকির কথা উল্লেখ করেছেন।

আইনি পদক্ষেপ ও সতর্কতা

ফেব্রুয়ারিতে ‘হাউস পার্মানেন্ট সিলেক্ট কমিটি অন ইন্টেলিজেন্স’-এর সদস্য কংগ্রেসম্যান জশ গোথাইমার ও ড্যারিন লাহুড সরকারি ডিভাইসে ডিপসিক নিষিদ্ধ করার জন্য আইন প্রণয়ন করেন। এরপর মার্চের শুরুতে তারা মার্কিন গভর্নরদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সরকারি ডিভাইসে এই চীনা এআই অ্যাপ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান। ৩ মার্চের এক চিঠিতে তারা লিখেছেন, “ডিপসিক ব্যবহারকারীরা অজান্তেই চীনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) সঙ্গে সংবেদনশীল তথ্য যেমন চুক্তি, নথি ও আর্থিক রেকর্ড শেয়ার করছেন। এই তথ্য ভুল হাতে পড়লে সিসিপির জন্য এটি একটি বিশাল সম্পদ হয়ে উঠতে পারে।”

অঙ্গরাজ্যগুলোর পদক্ষেপ

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া, টেক্সাস ও নিউ ইয়র্কের মতো বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য ইতিমধ্যে তাদের সরকারি ডিভাইসে ডিপসিকের এআই মডেল নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া দেশটির ২১টি অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলের একটি জোট কংগ্রেসের কাছে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে।

প্রযুক্তিগত ও নিরাপত্তা উদ্বেগ

ডিপসিকের সাশ্রয়ী এআই মডেলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত আধিপত্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতন দেখা গিয়েছিল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা শুধু ডিপসিকের বিরুদ্ধে নয়, বরং চীনা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে মার্কিন নীতির একটি অংশ।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ ডিপসিককে ঘিরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সর্বশেষ উদাহরণ। জাতীয় নিরাপত্তা ও ডেটা গোপনীয়তার প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রযুক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই নিষেধাজ্ঞা অন্যান্য ফেডারেল সংস্থাগুলোতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy