জেনারেটিভ এআইয়ের উত্থানের কারণে ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি হতে পারে অতিরিক্ত ৫০ লাখ টন ই-বর্জ্য– এমনই উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক নতুন গবেষণায়।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট ‘নেচার কম্পিউটেশনাল সায়েন্স’-এ। গবেষণাটি থেকে ধারণা মিলেছে, কোনও নিয়ম-কানুন না বদলালেও কেবল জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তিই দশকের শেষ নাগাদ ১২ লাখ থেকে ৫০ লাখ টন ই-বর্জ্য তৈরি করবে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, জেনারেটিভ এআইয়ের কারণে ই-বর্জ্যের পরিমাণ বছরে হাজার গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা ২০২৩ সালে দুই হাজার ছয়শ টন থেকে প্রতি বছরে বেড়ে ২০৩০ সাল নাগাদ পঁচিশ লাখ টন পর্যন্ত হবে।
‘সার্কুলার ইকোনমি’ বা বৃত্তাকার অর্থনীতির চর্চা এই বর্জ্য ১৬ থেকে ৮৬ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে বলে উল্লেখ রয়েছে গবেষণায়।
কোনও অর্থনীতিতে সম্পদ উৎপাদন ও ব্যবহারের শেষে নানাভাবে এর উপযোগিতা ধরে রাখা ও ফের কাজে লাগানোর বিষয় রয়েছে বৃত্তাকার অর্থনীতিতে। এতে যতদিন সম্ভব পরিবেশে থাকা বিভিন্ন উপাদান ও পণ্য ভাগ করে নেওয়া, লিজ দেওয়া বা পুনরায় ব্যবহারের মতো নানা বিষয় রয়েছে।
“টেকসই কম্পিউটিং নিয়ে আগের বিভিন্ন গবেষণায় প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় ছিল বিভিন্ন এআই মডেলের শক্তি ব্যবহার ও এ থেকে নির্গত কার্বনের উপর। তবে এআই মডেলের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন উপাদান বা যন্ত্রপাতি ও অপ্রচলিত নানা ইলেকট্রনিক টুলের বর্জ্য, যা ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য হিসাবে পরিচিত। তবে এগুলো কম গুরুত্ব পাচ্ছে,” উল্লেখ রয়েছে গবেষণায়।
গবেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই’কে সহজ করতে কম্পিউটার চিপের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে, যার ফলে পুরানো হার্ডওয়্যার দ্রুততম সময়ে বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
২০২০-২০৩০ সালের মধ্যে জেনারেটিভ এআইয়ের মাধ্যমে ব্যবহৃত ও ফেলে দেওয়া হার্ডওয়্যারের পরিমাণ অনুমান করতে কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করেছে গবেষক দলটি।
ওই মডেলে জেনারেটিভ এআইয়ের অনেক বেশি ব্যবহারের ক্ষেত্রে, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ই-বর্জ্য বেড়েছে ২৫ লাখ টন এবং মোট বেড়েছে ৫০ লাখ টন। এর মধ্যে রয়েছে ১৫ লাখ টন সার্কিট বোর্ড ও ৫ লাখ টন ব্যাটারি, যার দুটিতেই রয়েছে বিপজ্জনক ও দূষণকারী উপাদান।
অন্যদিকে জেনারেটিভ এআইয়ের ব্যবহার কম হলে ২০৩০ সালের মধ্যে ওই মডেলে প্রতি বছর ই-বর্জ্য বেড়েছে ৪০ লাখ টন এবং মোট বেড়েছে ১২ লাখ টন।
সম্প্রতি ‘গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটর’-এ প্রতিবেদনে ইঙ্গিত মিলেছে, ব্যক্তিগত কম্পিউটারের মতো ছোট আকারে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত টুলের বার্ষিক ই-বর্জ্য ২০২২ সালে ছিল মোট ৪৬ লাখ টন এবং এ বর্জ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে ৪ কোটি ৩২ লাখ টনে পৌঁছাবে। যার মানে, বিভিন্ন এআই সার্ভার ই-বর্জ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে পারে ৩ থেকে ১২ শতাংশ।
এই ই-বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে আনতে ‘সার্কুলার ইকোনমি’ চর্চার তিনটি কৌশলও খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। যেখানে আছে- বিভিন্ন প্রযুক্তিগত টুলের কর্মক্ষমতা উন্নত ও দীর্ঘমেয়াদি করা এবং এগুলোর মডিউল পুনরায় ব্যবহারের মতো বিষয়।
গবেষকরা বলেছেন, ই-বর্জ্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। এসব দেশ এআই প্রযুক্তিতে ব্যবহারের জন্য যদি সর্বশেষ চিপ কিনতে না পারে, তবে প্রযুক্তি জায়ান্টারা পুরানো চিপের বিভিন্ন মডেলই ব্যবহার করবে। ফলে দ্রুত কমিয়ে আনা যাবে ই-বর্জ্যের পরিমাণ।