বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের বিষয়টি একেবারেই ঝুঁকিমুক্ত কোনো উপায় নয়। তবে প্রযুক্তি খাতে এমন কিছু বিস্ময়কর বিনিয়োগের নজির রয়েছে, যা কেবল লাভের মুখই দেখেনি, আয় করেছে কোটি কোটি ডলার।
পতনের দ্বারপ্রান্তে থেকেও উঠে দাঁড়িয়েছে জুতার ব্র্যান্ড থেকে শুরু করে গ্যারেজে থাকা বইয়ের দোকান। ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের কারণেই বিস্ময়করভাবে ধনী হয়েছেন তারা৷
গুগলের ৫৩ নম্বর কর্মী ছিলেন যে শেফ
১৯৯৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে এক পরিবারে শেফ হিসাবে কাজ করতেন চার্লি আয়ার্স জুনিয়র। ওই সময় সার্চ ইঞ্জিন কী তা না জানার পরও গুগলের নির্বাহী শেফ হিসেবে কাজের জন্য আবেদন করেন তিনি। তাতে লাভ হয়নি। কেউ ছুঁয়েও দেখেনি তার সিভি।
শেষমেষ একেবারেই সাড়া না পেয়ে নিজেই বাসায় তৈরি বিভিন্ন বেক করা খাবার গুগলে নিয়মিত পাঠাতে শুরু করেন আয়ার্স।
আয়ার্সয়ের এই কৌশল কাজে আসে এবং তাকে ৫০ জন গুগল কর্মীর জন্য রান্নার কাজ দেয় গুগল। সে সময়ে গুগলের মোট কর্মীসংখ্যাই ছিল ৫০ জন।
এভাবেই কয়েক বছর চলে গেল। এক সময় স্পষ্ট হতে শুরু করল যে গুগল বড় কিছু একটা হতে যাচ্ছে। সে সময় গুগলের একজন আর্থিক বিশ্লেষক আয়ার্সকে এক বুদ্ধি দেন। বলেন, গুগলের বিনিয়োগ করতে। সে বুদ্ধিতেই গুগলে বিনিয়োগের জন্য বাবার কাছ থেকে ১৪ হাজার ডলার ধার নেন আয়ার্স। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ২৪ হাজার ডলার।
আয়ার্সয়ের বাবা তাকে সাবধান করে বলেছিলেন, যদি কোনো কেলেঙ্কারী ঘটে তবে আয়ার্সকে সব অর্থ ফেরত দিতে হবে।
২০০৬ সালে গুগল ছাড়েন আয়ার্স। ওই সময় তার মালিকানায় থাকা গুগল শেয়ারের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪ কোটি ডলারে, বর্তমানে যার মূল্য প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। এই অর্থ আয়ার্সকে নিজের রেস্তোঁরা চালু করতে ও তার বাবার অর্থ ফেরত দিতে সাহায্য করেছে।
নেটফ্লিক্স-এ কার্ল আইকানের বিনিয়োগ
নেটফ্লিক্স শুনলেই আমরা মনে করি ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের কথা। কিন্তু এ ঘটনা যে সময়ের, তখন স্ট্রিমিং বলতে কিছুই ছিল না। সে সময়ে নেটফ্লিক্স বাড়ি বাড়ি ডিভিডি পাঠাতো। তারও আগে ভিএইচএস ক্যাসেট ভাড়া দিত কোম্পানিটি। অনেকটা এই শতকের শুরুর দিকে দেশে ভিডিও ক্যাসেটে সিনেমা ভাড়া দেওয়ার মতন।
সে অবস্থা বদলাতে শুরু করে ২০১১ সালের দিকে। প্রথমবারের মতো স্ট্রিমিং ভিডিওতে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নেটফ্লিক্স। এ বিষয়টি অনেকের কাছেই ধাক্কার মতো ছিল এবং আট লাখের মতো মানুষ নিজেদের সাবস্ক্রিপশন নেটফ্লিক্স থেকে বাতিলের জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করেন। তবে তাদের মধ্যে ছিলেন না বিনিয়োগকারী কার্ল আইকান।
২০১২ সালে প্ল্যাটফর্মটিতে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন আইকান। যার ফলে কোম্পানির ১০ শতাংশ শেয়ার পান তিনি। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে তার বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ৪৪ কোটি ডলার।
গোটা বিশ্বে প্রায় ২৭ কোটি গ্রাহক রয়েছে নেটফ্লিক্সের। বিজনেস ইনসাইডারের মতে, এ বিনিয়োগের কারণে একশ ৯০ কোটি ডলারের মালিক এখন আইকান।
সংসারের অর্থ অ্যামাজনে ঢেলেছেন বেজোস
১৯ হাজার সাতশ কোটি ডলার সম্পদের মালিক এখন বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস। তাই তার নাম এই বিস্ময়কর বিনিয়োগকারীদের তালিকায় উঠে আসার বিষয়টি খুব একটা অবাক করা নয়।
প্রাথমিকভাবে নিজের গ্যারেজে এক অনলাইন বইয়ের দোকান থেকে যাত্রা শুরু হয় বেজোসের। গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অ্যামাজন’কে গড়তে জীবনের অনেক সময় ও অর্থ ঢেলেছেন তিনি।
পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অর্থ না পেলে অ্যামাজন আজকের অবস্থায় আসতে পারত না। মা-বাবা, জ্যাকি ও মাইক বেজোসকে ১৯৯৫ সালে নিজের নতুন ব্যবসায় আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগের জন্য রাজি করান বেজোস। ওই আড়াই লাখ ডলার এখন প্রায় পাঁচ লাখ সাত হাজার ডলারের সমান।
২০১৮ সালে এক লাখ কোটি ডলারের বাজার মূল্যের দ্বিতীয় আমেরিকান কোম্পানিতে পরিণত হয় অ্যামাজন।
অ্যাপলের তৃতীয় কর্মী মাইক মার্ককুলা
১৯৭৭ সালে অ্যাপল-এ যোগদানের পর এতে আড়াই লাখ ডলার বিনিয়োগ করেন মাইক মার্ককুলা। যার বর্তমান অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ ডলার। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনে অ্যাপল-এর বড় বিনিয়োগকারীদের একজন হয়ে ওঠেন মাইক।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই প্রাথমিক বিনিয়োগটি মার্ককুলারের জন্য ছিল সময় উপযোগী পদক্ষেপ। ২০১৮ সালে অ্যাপল এক লাখ কোটি ডলার বাজার মূল্যের প্রথম কোম্পানি হয়ে ওঠে। বর্তমানে এর মূল্য প্রায় তিন লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলার।
১৯৯৬ সালে অ্যাপল থেকে অবসর যান মার্ককুলা। বর্তমানে তিনি অ্যাপলের কত শতাংশ শেয়ারের মালিক তা অজানা। অনুমান বলছে, একশ ২০ কোটি ডলার পকেটে নিয়ে অ্যাপল ছেড়েছেন তিনি। যে কারো অবসরে যাওয়ার জন্য এই পরিমাণ অর্থ মন্দ নয়!