তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ছেলেমেয়েদের কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেমন জরুরি তেমনি জরুরি শিশুদের ইন্টারনেটের বিপদ থেকে মুক্ত রাখা। জানালেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট তানজীর আহম্মেদ তুষার
নির্দেশিকা তৈরি করুন
ব্যবহার শুরুর আগেই ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি পরিষ্কার নির্দেশিকা লিখিতভাবে তৈরি করে ফেলুন এবং প্রিন্ট করে কম্পিউটারের পাশে লাগিয়ে দিন। এটি থাকলে শিশুরা প্রথম থেকেই ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার প্রত্যাশা জানতে পারবে। এর মধ্যে থাকবে কোন কোন ধরনের ওয়েবসাইট দেখতে ও কার্যাবলি ইন্টারনেটে করতে পারবে। সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রতিদিন সর্বমোট কতক্ষণ ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। যদি কখনো কোনো বিষয় তাদের বোঝার বাইরে হয় তখন কী কী করা যেতে পারে তার দিকনির্দেশনা থাকবে। কোন ধরনের তথ্য তারা গ্রহণ করতে পারে এবং কোনগুলো গ্রহণ করা ঠিক হবে না তা লিখে রাখার পাশাপাশি আলোচনাও করতে হবে। তারা যদি কখনো ইন্টারনেট ব্যবহার নির্দেশিকার কোনো নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটাও নির্দেশিকাতে থাকতে হবে।
বাবা-মাকেও শিখতে হবে
তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে নিজেদেরও ওয়াকিবহাল রাখতে হবে যাতে করে সন্তানের ভার্চুয়াল জগৎটা নিরাপদ করা যায়। যেমন : সার্চ ইঞ্জিনের সেইফ সার্চ অপশন চালু রাখতে হবে। কিছু অ্যাপস ও অ্যান্টিভাইরাস রয়েছে যেগুলোতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের মাধ্যমে স্পর্শকাতর শব্দ ও বিষয়বস্তুযুক্ত ওয়েবসাইট প্রদর্শন বন্ধ করা যায়। সেগুলো ব্যবহার করলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে কোনো বিষয়বস্তু চলে আসবে না। প্যারেন্টাল কন্ট্রোলের পাসওয়ার্ড জটিল হতে হবে এবং তা মনেই রাখতে হবে।
ফেইসবুক
ফেইসবুক ব্যবহারে হারানো বন্ধু খুঁজে পাওয়া যায়, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা যায়, অনেক সময়ে ক্লাস বা পড়ার বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। অন্যদিকে শিশুকিশোর বয়সে ফেইসবুক ব্যবহারের ফলে শিশুটি সারা বিশে^র বড়দের মুখোমুখি হয়ে যায়। নিজেকে কীভাবে ফেইসবুকে উপস্থাপন করতে হবে এবং কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে তা বোঝার মতো যথেষ্ট পূর্ণতা থাকে না। ভার্চুয়াল জগতের মানুষদের অনেক বেশি বিশ^াস করার ফলে অনেক কিশোর-কিশোরী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফেইসবুক ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের নামে ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেয় না। তাই ফেইসবুকের মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হলে বাবা-মায়ের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।
ডেস্কটপ পিসি
ডেস্কটপ পিসিতে ল্যাপটপের তুলনায় কম্পিউটারের মৌলিক জ্ঞান অনুধাবন করা সহজ হয়। শিশু-কিশোরদের কম্পিউটারের কিবোর্ড ও মাউস নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেগুলো স্বল্পমূল্যে পরিবর্তন করা যায়। একই সঙ্গে বাবা-মায়ের পক্ষে ডেস্কটপ পিসি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হয়।
আস্থার সম্পর্ক তৈরি করুন
শিশু-কিশোরদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করুন। এমনভাবে আচরণ করুন যাতে তারা আপনাকে যেকোনো প্রশ্ন করতে পারে বা তথ্য শেয়ার করতে পারে। তাদের সঙ্গ দেওয়া ও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে তাদের জগতে প্রবেশ করুন।