প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়াতে যাচ্ছে ইন্টেল

উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বেশির ভাগ মাইক্রোপ্রসেসর ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্যের দাম বাড়াতে যাচ্ছে ইন্টেল। মার্কিন চিপ জায়ান্টটি এরই মধ্যে তার গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের শেষ দিকে এসব পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ইন্টেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণায় কম্পিউটারসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর নিক্কেই এশিয়া।

চলতি বছরের শরতেই সার্ভার ও কম্পিউটারের মতো ফ্ল্যাগশিপ পণ্যের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের (সিপিইউ) দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম চিপ নির্মাতা কোম্পানিটি। বিষয় সম্পর্কে অবগত তিনটি সূত্র আরো জানায়, ওয়াই-ফাই ও অন্যান্য কানেক্টিভিটি পণ্যসহ বেশির ভাগ পণ্যের দাম বাড়াতে যাচ্ছে ইন্টেল।

ইন্টেলের নির্বাহী পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে ব্যয় বৃদ্ধিতে দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে তারা। কোন হারে দাম বাড়ানো হবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। তবে পণ্য ভেদে ১০ ও ২০ শতাংশও দাম বাড়ানো হতে পারে বলেও জানান তারা।

যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ যখন বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, এমন সময় দাম বাড়ানোর দিকে এগোচ্ছে ইন্টেল। এতে কম্পিউটার, টিভিসহ বিভিন্ন ভোক্তা পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ, যা ৪০ বছরের সর্বোচ্চ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২৮ এপ্রিল বছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময়েই উৎপাদিত চিপের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছিল ইন্টেল।

বৈশ্বিক মহামারীর বিরূপ প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক পণ্য ও কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থায়। এতে ব্যক্তিগত কম্পিউটার (পিসি), স্মার্টফোন থেকে শুরু করে গাড়ি নির্মাতারাও নিজস্ব পণ্য নির্মাণের কাঁচামাল সময়মতো হাতে পাচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতেই নিজস্ব পণ্যের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানাল মার্কিন চিপ জায়ান্টটি।

ইন্টেলের প্রধান পিসি চিপ গ্রাহকদের মধ্যে এসার ও আসুসটেক প্রকাশ্যে জানিয়েছে, চলতি বছরে পিসি বিক্রিতে মন্দার আশঙ্কা করছেন তারা। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসার চেয়ারম্যান জেসন চ্যান জানান, বর্তমানে তার কোম্পানি চিপ স্বল্পতায় ভুগছে না। বরং কিছু চিপ নির্মাতা কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহীরা তাকে আরো চিপ ক্রয়ের অনুরোধ করেছেন। গত এপ্রিলের আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশের সময় ইন্টেল সিইও প্যাট জেলসিংগার সতর্ক করে বলছিল, বিভিন্ন ঘটনা পরিক্রমায় চিপের চাহিদায় শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উৎপাদন ব্যয় ও বিভিন্ন উপকরণ স্বল্পতার কারণে মূল্যবৃদ্ধিরও আভাস দিয়েছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার নিক্কেই এশিয়ার কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইন্টেল জানায়, প্রথম প্রান্তিকে আয়-ব্যয়ের উপাত্ত প্রকাশের সময় আমরা জানিয়েছিলাম, মূল্যস্ফীতির চাপে কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হতে পারে। কোন কোন পণ্যে কেমন দাম বাড়বে আমরা এরই মধ্যে আমাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দিতে শুরু করেছি।

ইন্টেলের এশীয় প্রতিদ্বন্দ্বী টিএসএমসি সম্প্রতি জানায়, ২০২৩ সালের শুরুতে তারা চিপের দাম বাড়াবে। এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির এক বছরের মধ্যেই ফের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিল বিশ্বের বৃহত্তম চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা কোম্পানিটি। এদিকে চীনভিত্তিক চিপ নির্মাতা কোম্পানি এসএমআইসিও একই পথে হাঁটার ঘোষণা দেয়। তাদেরও দাবি, বিভিন্ন উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এতে তাদের মোট আয় ১০ শতাংশ কমার আশঙ্কা করছে চীনা কোম্পানিটি।

চলতি বছরের শুরু থেকেই স্মার্টফোন, পিসি, টিভি ও কনসোলের চাহিদা কমেছে। ডিভাইস নির্মাতা কোম্পানিগুলোর অবিক্রীত পণ্যের মজুদ অনেক বেড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক সাইট দি ইলেকের বরাতে জানা গেছে, পরিবেশকদের কাছে প্রায় পাঁচ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন অবিক্রীত স্যামসাংয়ের। চলতি বছরে ২৭ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রি করতে চায় স্যামসাং। সেখানে বার্ষিক স্মার্টফোন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ শতাংশ অবিক্রীত। ১০ শতাংশের কম বেশি অবিক্রীত থাকার উপাত্তকে স্বাস্থ্যকর বিবেচনা করেন প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষকরা। চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে দুই কোটি ইউনিট করে স্মার্টফোন উৎপাদন করেছে স্যামসাং। কিন্তু মে মাসে উৎপাদনের পরিমাণ এক কোটি ইউনিটে নেমে আসে। গত বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে এক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল স্যামসাং।

Related Posts

© 2024 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy