টুইটার কিনতে এত টাকা কোথায় পাচ্ছেন ইলন মাস্ক? জেনেনিন তার পরবর্তী পদক্ষেপ

বিশ্বের শীর্ষধনী ইলন মাস্কের কাছে সত্যি সত্যি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে গত সোমবার (২৫ এপ্রিল) যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলারে টুইটার বিক্রির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকায় টুইটার কিনে নিচ্ছেন টেসলা সিইও। এর মধ্যে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার তার ব্যক্তিগত গ্যারান্টি। এখন প্রশ্ন উঠছে, টুইটার কিনতে ব্যক্তিগত গ্যারান্টির বিপুল এই অর্থ কীভাবে জোগাড় করবেন মাস্ক?

৫০ বছর বয়সী এ ধনকুবের টুইটার কিনতে ব্যাংকের অর্থায়নে ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলার দেওয়ার রূপরেখা তুলে ধরেছেন, ১ হাজার ২৫০ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি এসেছে তার মালিকানাধীন ইলেক্ট্রিক গাড়িনির্মাতা কোম্পানি টেসলা থেকে। তবে বাকি অর্থ তিনি কীভাবে যোগান দেবেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী মানুষ ইলন মাস্ক যে এই অর্থ জোগাড় করে ফেলবেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার ইনডেক্স অনুসারে, বর্তমানে মাস্কের সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। তবে তার কাছে নগদ মাত্র ৩০০ কোটি ডলার এবং আরও কিছু তরল সম্পদ রয়েছে।

এ অবস্থায় টুইটার কেনার বাকি অর্থ নিম্নোক্ত উপায়ে সংগ্রহ করতে পারেন ইলন মাস্ক-

অন্য বিনিয়োগকারী
মাস্কের সামনে একটি রাস্তা হলো- সমমনা বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করা। অর্থাৎ, টুইটার কেনায় তারল্যের কিছু অংশ নতুন অথবা বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে আসতে পারে।

মাস্ক এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, এই ধরনের কৌশল তার বিবেচনায় রয়েছে। টুইটার কিনতে প্রাথমিক প্রস্তাব উপস্থাপনের পরে তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আইনগতভাবে অনুমোদিত যত বেশি সম্ভব শেয়ারহোল্ডারকে ধরে রাখাই তার উদ্দেশ্য।

যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারি কোম্পানিগুলিতে সাধারণত দুই হাজারের কম শেয়ারহোল্ডার থাকে, যার অর্থ- বিক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বেশিরভাগ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী আর টুইটারের মালিক থাকবেন না। তবে মাস্কের সিদ্ধান্তে যদি বিশ্বাস থাকে, তাহলে টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসির মতো বড় শেয়ারহোল্ডাররা তাদের অংশ ধরে রাখতে পারেন। টুইটারের বর্তমানে ডরসির শেয়ার প্রায় ১০০ কোটি ডলারের।

সোমবার ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, ইলন মাস্ক তার তারল্য অংশীদারদের ঐক্যবদ্ধ করছেন এবং সম্ভাব্য অন্য সহ-বিনিয়োগকারীদের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেয়ার বিক্রি
ইলন মাস্ক যদি যথেষ্ট বিনিয়োগকারী জোগাড় করতে না-ও পারেন, তবুও অনেকটা একাই এগিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি রয়েছে তার। এর কারণ, টেসলায় মাস্কের মহামূল্যবান শেয়ার।

১ হাজার ২৫০ কোটি ডলার ঋণ কভার করার পরেও টেসলায় মাস্কের আরও অন্তত ২ হাজার ১৬০ কোটি ডলারের শেয়ার থেকে যাবে। অর্থাৎ টেসলার শেয়ার বিক্রি করেই টুইটারের কেনার প্রায় পুরো অর্থ জোগাড় করে ফেলতে পারেন এ মার্কিন ধনকুবের। অবশ্য সেক্ষেত্রে টেসলার শেয়ার দরের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

মাস্কের মালিকানাধীন অন্য কোম্পানি- স্পেসএক্স, বোরিং প্রভৃতির শেয়ারও বিক্রি করা সম্ভব। তবে সেই সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানে টুইটার কেনার মতো যথেষ্ট তারল্য নেই।

ক্যাশ বা ক্রিপ্টো
আরেকটি সম্ভাবনা হচ্ছে- ইলন মাস্ক হয়তো ব্লুমবার্গের ধারণার চেয়েও ধনী।

মাস্কের সম্পদের পরিমাণ হিসাব করা হয়েছে মূলত প্রকাশ্যে লেনদেন করা শেয়ার এবং সংবাদ প্রতিবেদনের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। তবে তার ব্যক্তিগত অর্থ-সম্পদের অনেক তথ্যই জানা যায় না। যদি তার বিনিয়োগের পোর্টফোলিও বর্তমান বাজারকে ছাড়িয়ে যায়, অর্থাৎ ইলন মাস্ক ব্লুমবার্গের অনুমানের চেয়েও ধনী হন, তাহলে ২ হাজার ১০০ কোটি ডলার জোগাড় করতে তার নতুন উৎসের প্রয়োজন না-ও হতে পারে।

তাছাড়া, ইলন মাস্ক গত জুলাইয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বিটকয়েন, ইথার ও ডোজকয়েনের মালিক। যদিও এটি স্পষ্ট নয়, এগুলো তার কাছে কী পরিমাণ রয়েছে বা কতদিন আগে সেগুলো কিনেছেন। তবে প্রথম দুটি ক্রিপ্টোকারেন্সির দর ২০২০ সালের মার্চের পর থেকে যথাক্রমে ৭২০ শতাংশ ও ২ হাজার ৬০০ শতাংশ বেড়েছে, যা এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। মাস্কের টুইটার কেনার খবরের পর গত সোমবার ডোজকয়েনের দরও বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।

Related Posts

© 2025 Tech Informetix - WordPress Theme by WPEnjoy