
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে! গত কয়েকদিনের শুষ্ক গরম আর অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেতে চলেছে দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে সক্রিয় হচ্ছে বর্ষা, এবং আগামী চারদিনের মধ্যেই এটি প্রবেশ করতে পারে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হবে বিক্ষিপ্ত থেকে ভারী বৃষ্টি, যা তাপমাত্রায় ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত স্বস্তি আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ার পূর্বাভাস:
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ বাংলাদেশ এবং সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, যা দক্ষিণ ওড়িশা পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বরাবর বিস্তৃত। একই সঙ্গে পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলেও আরও একটি ঘূর্ণাবর্তের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই জোড়া ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে রাজ্যে, যা দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
রবিবার (আজ) কলকাতা-সহ দক্ষিণের সব জেলায় ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ায় ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ঝড় হতে পারে। বাকি জেলাগুলিতে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
আগামী বুধবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বিক্ষিপ্ত ঝড়বৃষ্টির জন্য হলুদ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সোমবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টির ফলে জেলাগুলিতে রবিবার থেকে পরবর্তী তিন দিন তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হ্রাস পাবে, যা দীর্ঘদিনের গরম থেকে স্বস্তি দেবে।
উত্তরবঙ্গেও দাপট বাড়াচ্ছে বর্ষা:
শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতলে ঝড়বৃষ্টির দাপট আরও বাড়তে চলেছে। দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার দার্জিলিং ও কালিম্পং-এ প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। মালদহ ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার ও মঙ্গলবার কিছুটা বিরতি থাকলেও, বুধবার থেকে উত্তরবঙ্গে ফের বর্ষা সক্রিয় হবে। মালদা এবং দুই দিনাজপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারও উত্তরবঙ্গের সব জেলায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টির কারণে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকা-সহ একাধিক নদীর জলস্তর বাড়বে, যার ফলে নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ি জেলাগুলিতে ভূমিধসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। পর্যটকদের সড়কপথে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে শস্যের ক্ষতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। উত্তরবঙ্গেও ঝড়বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমবে।
কলকাতার আবহাওয়া:
কলকাতা শহরেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি এবং ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তবে সেই সঙ্গে ভ্যাপসা গরমও অনুভূত হবে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত শহরে এই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
আবহাওয়া দফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা প্রবেশ করতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহের জন্য অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় আগামী দু’দিনের মধ্যেই বর্ষা প্রবেশ করবে, এবং পশ্চিমবঙ্গেও একই সময়ে বর্ষা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।